বানারহাটঃ প্রাপ্য মজুরির দাবিতে রবিবার প্রায় দিনভর বানারহাট থেকে ভুটানগামী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে শামিল হলেন বানারহাট ব্লকের নিউ ডুয়ার্স চা বাগানের শ্রমিকরা। এদিন সকাল ৮টা থেকে প্রায় বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। তবে, এদিন দাবি পূরণের কোনও আশ্বাস না মেলায় সোমবারও অবরোধে শামিল হওয়ার হুমকি দিয়েছেন বাগানের শ্রমিকরা।
বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা জানিয়েছেন, অ্যান্ড্রিউ ইউল গ্রুপের অন্তর্গত ওই চা বাগানের শ্রমিকরা দীর্ঘ সাত সপ্তাহ ধরে কাজের মজুরি পাচ্ছেন না। পিএফের টাকাও গত ১১ মাস ধরে জমা পড়ছে না। বাগানের হাসপাতালে প্রায় তিন বছর ধরে চিকিৎসক নেই। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়লে অনেকেই চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন। শ্রমিকদের আরও অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে রেখেছে বাগান কর্তৃপক্ষ। ফলে বিদ্যুতের বিল মেটাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে শ্রমিকদের। বর্তমানে শ্রমিকদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা হওয়াতেই বাধ্য হয়ে তাঁরা পথ অবরোধে শামিল হয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ ওই বাগানের শ্রমিকরা তাঁদের দাবি নিয়ে বাগানটির ফ্যাক্টরির সামনে ধর্নায় বসেছিলেন। সে সময়ে বাগান কর্তৃপক্ষ বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। শ্রমিকদের কথায়, রাজনৈতিক দলের নেতারা চামুর্চি এলাকায় প্রচারে গেলেও নিউ ডুয়ার্স চা বাগানের শ্রমিকরা সমস্যায় আছেন জেনে কেউ ওই বাগানে প্রচারে আসছেন না। চা শ্রমিক আশা সোরেন বলেন, ‘আমাদের সমস্যা কেউ সমাধান করতে চান না, তাই কেউ প্রচারেও আসতে চাইছেন না। আমাদের শুধু ভোট দিতে বলা হয়, কিন্তু আমাদের সমস্যা সমাধানে কেউ এগিয়ে আসেন না।’ বির্জিনিয়া বারলা নামে আর এক শ্রমিক বলেন, ‘কাজ করার পরও আমরা প্রাপ্য মজুরি পাচ্ছি না। সরকারি র্যাশন দিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন কোনওমতে চলে, কিন্তু তারপর সমস্যায় পড়তে হয়। দোকানদারও আর বাকি দিতে চাইছেন না। সমস্যা সমাধান না হলে আন্দোলন চলতে থাকবে।’ শ্রমিক জ্যোতি মাহাতোর কথায়, ‘মজুরি তো বকেয়া আছেই, তিন বছর ধরে হাসপাতালে চিকিৎসক নেই। বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন বিদ্যুতের বিল মেটাতে নাজেহাল হয়ে পড়ছি। এভাবে চলতে পারে না।’
তৃণমূলের শ্রমিক নেতা তবারক আলি বলেন, ‘কেন্দ্র সরকারের ভারী শিল্পমন্ত্রকের আওতাধীন সংস্থা অ্যান্ড্রিউ ইউল-এর মোট চারটি বাগান রয়েছে বানারহাট এলাকায়। বাগানে মজুরি ও পিএফ নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে বিজেপি নেতারাই ভালো বলতে পারবেন।’ বিজেপির শ্রমিক নেতা জয়রাজ বিশ্বকর্মা জানান, ‘এই মুহূর্তে মোদির সভা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি, বিষয়টি নিয়ে পরে মন্তব্য করব।’ তবে এ বিষয়ে বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেউ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
