সানি সরকার, রংপো-মাঝিটারঃ একের পর এক দেশাত্মবোধক গান বাজছে, ওরা জাতীয় পতাকা নাড়িয়ে যাচ্ছে। যেন বাংলা থেকে ট্রেনের চাকা গড়িয়ে সিকিম পৌঁছে গিয়েছে। রংপো স্টেশনের শিলান্যাসকে কেন্দ্র করে সিকিমবাসীর আবেগ উচ্ছ্বাসে স্পষ্ট সেবক-রংপো রেল প্রকল্প নিয়ে কতটা অপেক্ষা করে রয়েছে পাহাড়ি রাজ্যটি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন দেশের বাকি অংশের সঙ্গে রংপো স্টেশনের শিলান্যাস করলেন ভার্চুয়ালি, তখন ভিড়ের মধ্যে ভারত মাতার জয়ধ্বনি। হাতে হাতে জাতীয় পতাকার উত্তোলন।
গত ৪ অক্টোবর ত্রাস হয়ে ওঠা তিস্তার (Teesta) ছোবলের দাগ স্পষ্ট কালিঝোরা থেকে ২৯ মাইলে। হঠাৎ বিধ্বংসী হয়ে ওঠা তিস্তাকে সেতুতে বেঁধে আগামী বছর দুর্গাপুজোর আগে সেবক-রংপো রেলপ্রকল্পের কাজ শেষ করা দুস্তর চ্যালেঞ্জ। তা সামলে দেশের রেল মানচিত্রে সিকিমকে জুড়ে ফেলতে প্রত্যয়ী ভারতীয় রেল। সোমবার দেশের ৫৫৪টি রেলস্টেশনের কাজের সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। এই তালিকায় ছিল রংপো স্টেশনের (Rangpo railway station) শিলান্যাস। যার প্রস্তুতি রবিবার খতিয়ে দেখে এসেছিলেন আলিপুরদুয়ারের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার অমরজিৎ গৌতম। এদিন তিনি প্রকল্পের খুঁটিনাটি এবং কাজের অগ্রগতি নিয়ে তিনি কথা বলেন রেল আধিকারিক ও ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের (ইরকন) কর্তাদের সঙ্গে। সোমবার ভার্চুয়ালি সিকিমের একমাত্র রংপো রেলস্টেশনের শিলান্যাস করলেন নরেন্দ্র মোদি। আর এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উৎসবের আবহ লক্ষ্য করা গিয়েছে সিকিমে। পাহাড়ের কোনায় কোনায় সেবক-রংপো রেলপ্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে পড়েছে পোস্টার। রংপোর অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে এই রেলস্টেশনকে ঘিরে উপস্থিত জনতার মধ্যে ছিল যথেষ্টই উন্মাদনা।
সিকিমের রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্য বললেন, “কয়েক দশকের দু:খ ঘোচার আনন্দে আমার চোখে জল চলে এসেছে।” সিকিমের একমাত্র রেল স্টেশন রংপোর শিলান্যাসে তিনি সমস্ত কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। রেলের পদস্থ কর্তারা ছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিকিমের সাংসদ ও সিকিমের একাধিক বিধায়ক।
উল্লেখ্য, বাস্তবে স্টেশনের জায়গা নির্দিষ্ট করে তার ভূমির পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ। এখন শুধু ভবন তৈরি বাকি। তিস্তাবাজার, মল্লি স্টেশনের কাজও অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। রেল সূত্রে খবর, ৪৪.৯৮ কিলোমিটারের রেলপ্রকল্পটির ৮৫ শতাংশই টানেলের মধ্যে। আগামী বছর অগাস্টের মধ্যেই কাজ শেষ করে দেওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ইরকনের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর মহিন্দার সিং। তাঁর বক্তব্য, ‘১৪টি টানেলের মধ্যে আটটির খননকাজ শেষ। এই টানেলগুলিতে আগামী মাস থেকে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়ে যাবে। বাকি টানেলের কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। প্রত্যেকটি সেতুর পিলারের ভিত তৈরি শেষ। সেতু তৈরির ক্ষেত্রেও বেশি সময় লাগবে না।’ কিন্তু নদীখাতে জমা পলির কারণে তিস্তা যদি বর্ষার সময় আবার ভয়ংকর হয়ে ওঠে, তবে কি আগামী বছর পুজোর মুখে সেবক থেকে রংপো ট্রেনের চাকা গড়াবে? সংশয়ে রয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে রেলকর্তারাও।