কিশনগঞ্জঃ বাল্য বিবাহ রুখতে নিত্যদিন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে দৌড়ে বেড়ান মেয়েটি। গ্রামের পিছিয়ে পড়া মহিলাদের বোঝান বাল্য বিবাহের কুফল। আর তাঁর এই কর্মকাণ্ডই তাঁকে পৌঁছে দিল বিশ্বের দরবারে। বাল্যবিবাহ নিয়ে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়েছে রাষ্ট্রসংঘের একটি সম্মেলনে। তিনি হলেন কিশনগঞ্জ শহরের অদূরে শিমুলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা রোশনি পারভিন।
আগামী ১৬ নভেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় রাষ্ট্রসংঘ আয়োজন করেছে ইয়ং অ্যাক্টিভিস্টস সামিট। সেখানে নারী ও শিশুকল্যান নিয়ে বক্তব্য রাখতে ডাক পেয়েছেন গোটা বিশ্বের মোট ৫জন মহিলা, যারা দীর্ঘদিন ধরে নারী ও শিশু কল্যানে কাজ করে আসছেন সাফল্যের সঙ্গে। সেই সম্মেলনে ডাক পেয়েছেন কিশনগঞ্জের শিমুলবাড়ির বাসিন্দা রোশনি পারভিন। ইতিমধ্যেই জেনেভা থেকে আমন্ত্রণপত্র চলে এসেছে রোশনির হাতে। ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি রোশনি ছাড়াও রয়েছেন অন্য চার দেশের চার প্রতিনিধি।
জানা গিয়েছে, রোশনি পারভিন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। তিনি নিজেও বাল্য বিবাহের শিকার। অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই অতিবাহিত হচ্ছে তাঁর জীবন সংগ্রাম। নিজে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বাল্যবিবাহের কুফল। আর সে কারণেই বাল্যবিবাহের কুফল রাজ্যের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সচেতনতার কাজ শুরু করে দেন রোশনি। ২০১৮ সালে চাইল্ড লাইনের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। শুরু করেন বিহারের আর্থ সামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া এলাকায় বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে সাধারন মানুষকে সচেতন করতে। এই কাজ করতে গিয়ে রোশনিকে অনেক অপবাদ সহ্য করতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
তবুও তাঁর মহৎ উদ্দেশ্য থেকে পিছিয়ে আসেননি রোশনি পারভিন। চাইল্ড লাইনের হয়ে কাজ করতে করতেই ২০১৯ সালে তিনি যোগ দেন ইউনেসকোর বাল্য বিবাহ রোধ সংক্রান্ত প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর পদে। আর সেখানে দলিত সমাজের বাল্য বিবাহ রোধে সফলতার সঙ্গে কাজ করেন। এই কাজের জন্যে তিনি জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে সম্মানিত হন। শুধু বাল্যবিবাহ রোধই নয়, এমনকি বিবাহিতা ড্রপ আউট নাবালিকাদের স্কুল মুখী করেন তৎপরতার সঙ্গে।
এর মধ্যেই বিশ্ব স্তরে ইয়ং অ্যাক্টিভিস্টস সামিটে বাল্যবিবাহ নিয়ে বিশ্বের দরবারে বক্তব্য রাখতে রোশনিকে সুযোগ দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। রাষ্ট্রসংঘের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি কিশনগঞ্জে এসে রোশনির কাজকর্ম খতিয়ে দেখেন। তারপরই রাষ্ট্রসংঘ রোশনিকে সামিটে অংশগ্রহনের সুযোগ দেন। জানা গিয়েছে জেনেভায় আয়োজিত এই সামিটে রোশনি বক্তব্য রাখবেন ভারত ও সীমান্তবর্তী এলাকায় বাল্য বিবাহের কুফল ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে। জেনেভার এই সামিটে যাতায়াত থাকা-খাওয়ার যাবতীয় বন্দোবস্ত করবে রাষ্ট্রসংঘ।
কিশনগঞ্জ লাগোয়া শিমুলবাড়ীর অতি সাধারণ পরিবারের মেয়ে রোশনির আলোয় দেশ আলোকিত হতে চলেছে বলে সবাই সাধুবাদ জানিয়েছেন শহরের বিশিষ্টজনেরা। রাষ্ট্রসংঘের জেনেভা সম্মেলনে সুযোগ পাওয়া আগামীতে বাল্য বিবাহ নিয়ে কাজ করতে আরও মনোবল বাড়াবে বলে মনে করছেন রোশনি পারভিন।