সমীর দাস,কালচিনি: সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বায়ন, নব্য-উপনিবেশবাদ এবং সাংকৃতিক আগ্রাসনের ফলে শক্তিশালী ভাষাগুলি অন্য ভাষার উপর আধিপত্য বিস্তার করছে। এর ফলে আশঙ্কাজনক হারে ছোট ছোট ভাষার বিলুপ্তি ঘটছে। যা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে মাতৃভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার দায় তাই প্রতিটি মানুষের।
মাতৃভাষাকে ভালোবেসে,সাহিত্য করতে এসেছেন কালচিনি চা বাগানের কামার লাইনের বাসিন্দা রামকুমার রানা। তিনি সাদরি ভাষার একজন কবি ও গল্পকার। চা বাগানের মানুষ তিনি। তাই তাঁর লেখা বেশিরভাগ গল্পে চা শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার কথা থাকে। সাদরি ভাষায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৫০টি কবিতা ও ২০টি গল্প লিখেছেন তিনি। সাদরি ভাষার স্কুলে প্রাথমিক স্তরে তাঁর লেখা কবিতা গল্প ইতিমধ্যে পাঠ্য হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
রামকুমার জানান, রুশ লেখক ফিয়েদোর দস্তয়েভস্কির বাংলা অনুবাদের বই পড়েই তিনি প্রথম কবিতা ও গল্প লেখার রসদ খুঁজে পান। প্রথম জীবনে ছিলেন কালচিনি চা বাগানের শ্রমিক। পরে পদোন্নতি হয়ে তিনি বাগানের সাব-স্টাফ হয়েছিলেন। বাবা-মা দুজনই ছিলেন চা বাগানের শ্রমিক। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের রোজগারেই সংসার চলত তাঁদের। সেই মা-ও অসুস্থ হয়ে পড়লে গোটা সংসারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। উচ্চশিক্ষা লাভেরও আর সুযোগ পাননি। প্রায় ১২ বছর আগে কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে সাহিত্যচর্চা এখনও সাবলীলভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। গত শতকের আশির দশকে তাঁর লেখা কবিতা রেডিওতে পাঠ করা হয়েছিল। সেই থেকে সাহিত্যচর্চায় আরও উৎসাহ পান। তিনি বলেন, ‘এখন দিন বদলেছে। চারদিকে সামাজিক মাধ্যমে নানা বিষয়ে চর্চা হয়। সাদরি ভাষাকে জনপ্রিয় করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত গল্প কবিতা লিখি।’
তাঁর লেখা পোস্ট সমাদৃত হচ্ছে নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছেও। তাঁর লেখা ‘ভৌজি’,‘জোড়ি জুইন গেলাক’-এর মতো গল্প সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুল প্রশংসা পেয়েছে।রামকুমার জানান, যেখানেই সাদরি ভাষার সাহিত্যচর্চার খবর পান, সেখানেই যান তিনি। কিছুদিন আগে রায়মাটাং চা বাগানে কয়েকজন সাদরি ভাষার শিক্ষাবিদ মিলে সাদরি স্কুল খুলেছেন। সেই স্কুলে প্রাথমিক স্তরে পড়ানো হচ্ছে তাঁর কয়েকটি লেখা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লেখা চালিয়ে যেতে চান। নবীন প্রজন্ম মাতৃভাষাকে ভালোবাসতে শিখলেই প্রচেষ্টা সার্থক, বলছেন সাদরি কবি রামকুমার।