মাথাভাঙ্গা: জন্মের পর শারীরিক কিছু ত্রুটি লক্ষ্য করায় নার্সিংহোম থেকে বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় এই বলে, সুস্থ হবার আশা নেই। স্বাভাবিক হাঁটাচলার গতি, কথা বলা, কানে শোনা সবদিকের প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে গিয়ে হার না মানা মনোভাবকে সঙ্গী করে উচ্চমাধ্যমিকে সফল হল মাথাভাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের এ বছরের বিশেষভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থী সাগরিকা সরকার।
ভালোবেসেই পড়াশোনাকে আগলে রেখেছে সাগরিকা। এমএ পাশ করে শিক্ষিকা হওয়ার লক্ষ্যে অদম্য জেদ নিয়ে পরীক্ষায় বসেছিল। আশীর্বাদ করেছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অর্চনা পাল। নিজের পায়ে দাঁড়াবার আরও এক কদম এগিয়ে গেল সে। ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, কোনওকিছুই বাধা নয়, নজির গড়ল ছোটবেলায় থাইরোসিসে আক্রান্ত মেয়েটি, যাকে কাঠের সাহায্যে মাটিতে গর্ত করে হাঁটানোর চেষ্টা করাতেন বাবা-মা।
বুধবার নিজের রেজাল্টে ‘পাশ’ শব্দটা দেখে আনন্দে আত্মহারা সাগরিকা। প্রাপ্ত নম্বর ২১৪। সংখ্যার চেয়ে এগিয়ে এখানে নিজের ১০০% দিয়ে টিকে যাওয়া। সাগরিকার বাবা, মা দু’জনেই স্কুল শিক্ষক। দুই মেয়ের মধ্যে বড় সাগরিকা। বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ার কারণে বরাবর একটু বেশিই কেয়ারে রাখা হয়েছে তাকে। মা স্বপ্না সরকার জানান, পরীক্ষার সময় সাগরিকা যতগুলো প্রশ্নের উত্তর করতে পারেনি, বাড়ি এসে আবার চেষ্টা করেছে লেখার। এখন শুরু হবে কলেজের পড়াশোনা। বাবার কাছে আবদার করে ইতিহাস, বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বই আনিয়ে আবার চলছে প্রস্তুতি। সামনে থাকতেই হবে বাবা অথবা মাকে। তবেই তো পরিপাটি করে শাড়ি আর হাতে ঘড়িতে ছাত্ররা পাবে ভবিষ্যতের সাগরিকা ম্যডামকে।