অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার: দুর্গম বক্সা পাহাড়ের গ্রামগুলিতে এখন বেহাল হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা। ওই এলাকায় পরিষেবা পৌঁছে দেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। তাঁদের প্রায় এক বছর ধরে বেতন বন্ধ। এমনকি যে চিকিৎসক বক্সা পাহাড়ে গিয়ে রোগী দেখেন, তার বেতনও বন্ধ। ওষুধের জন্য ফান্ডও কমে গিয়েছে।
বক্সা পাহাড়ের ১৩টি গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার জন্য এই সংগঠনের ওপরই নির্ভরশীল। তবে বর্তমান জটিল পরিস্থিতি নিয়ে তেমন কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে না প্রশাসনকে। বরং ব্লক প্রশাসনের দাবি, এর ফলে পরিষেবা দিতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কালচিনির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা: সুভাষ কর্মকারের কথায়, ‘ভ্যাকসিনেশন সহ সব কাজ ঠিক করেই হচ্ছে। ওখানের কর্মীদের বেতন সরাসরি রাজ্য থেকে দেওয়া হয়। জেলা বা ব্লকের কোনও বিষয় নেই।’ ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কালচিনি ব্লকের জেনারেল ম্যানেজার তুষার চক্রবর্তী সমস্যা মিটবে বলে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সদস্যদের বেতন বন্ধের বিষয়টি বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হয়েছে। শীঘ্রই এই সমস্যা মিটবে বলে আমরা আশাবাদী।’
বক্সা পাহাড়ের গ্রামগুলো আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের রাজাভাতখাওয়া অঞ্চলের অন্তর্গত। পাহাড়ের গ্রামগুলোয় স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে বরাবরই কোনও না কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করেছে। বর্তমানে যে সংগঠন বক্সা পাহাড়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার কাজ করছে তাতে ১৪ জন সদস্য রয়েছে। তাঁরাই পাহাড়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পরিষেবা পৌঁছে দেন। কোনও বিশেষ পরিষেবা দিতে হলে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে পৌঁছে যান।
অন্যদিকে, মাসে দু’দিন করে একজন সরকারি চিকিৎসকও বক্সা ফোর্টের কাছে বক্সা ডুয়ার্স কমিউনিটি হেলথ ইউনিটে গিয়ে রোগী দেখতেন। ওখানে রোগী দেখার জন্য ওই চিকিৎসককেও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে বেতন দেওয়া হত। তবে প্রায় এক বছর থেকে বেতন বন্ধ থাকায় ওই চিকিৎসকও হেলথ ইউনিটে আসা কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে বক্সার বাসিন্দাদের কাছে। প্রেমা দর্জি নামে বক্সা ফোর্টের এক বাসিন্দার কথায়, ‘আগেতো ডাক্তার বাবু ঠিক করে আসতেন। এখন কম আসেন। হেলথ ইউনিটও বেশিরভাগদিন বন্ধই থাকে। খোলা থাকলেও সব ওষুধ পাওয়া যায়না।’ নিমা ডুকপা নামে আরেক বাসিন্দা জানান, স্বাস্থ্য পরিষেবা বেহাল থাকায়, অনেককেই পাহাড় থেকে নীচে নেমে আলিপুরদুয়ার শহরে এসে ডাক্তার দেখাতে হয়। কেউ আবার কালচিনি বা দমনপুর থেকে গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসেন। যেটা অনেক সমস্যার।
অন্যদিকে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা জানাচ্ছেন, গ্রামে গ্রামে তাঁরা ঘুরছেন তবে ওষুধ কম থাকায় পরিষেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। এমনকি বেতন আটকে থাকায় তাঁদের সংসার চালাতে সমস্যা হচ্ছে। এক সদস্যের কথায়, ‘এক বছর বেতন পাইনি। এই মাস শেষ হলে তেরো মাস হবে। এইভাবে জানি না আরও কতদিন চলবে। কতদিন বেতন ছাড়াই কাজ করতে হবে।’