অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ নিয়ে ময়নাগুড়িতে (Maynaguri) দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) একাধিক নেতা। রবিবার ময়নাগুড়ি নতুন বাজার এলাকায় বিক্ষুব্ধ নেতারা একসঙ্গে মিলিত হয়ে বৈঠক করার পর দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। লোকসভা নির্বাচনের এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) ময়নাগুড়িতে সভার ঠিক আগে এক ঝাঁক গুরুত্বপূর্ণ নেতার দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্তে তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। দলীয় কোন্দল ফের প্রকাশ্যে চলে আসায় অস্বস্তি বাড়ল শাসকদলের।
দলীয় পদ থেকে পদত্যাগীদের তালিকায় রয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সম্পাদক সমীরণ চৌধুরী (প্রবীর), ময়নাগুড়ি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ও তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য অমিতাভ চক্রবর্তী (মিতু), ময়নাগুড়ি টাউন ব্লক তৃণমূলের সম্পাদক অপু রাউত, জেলা তৃণমূল জয়হিন্দ বাহিনীর সহ সভাপতি ও ময়নাগুড়ি টাউন ব্লক তৃণমূলের সদস্য শ্যামল দত্ত, টাউন ব্লক তৃণমূলের সম্পাদক সুশীল সরকার প্রমুখ। সকলেই ময়নাগুড়ি শহরের বাসিন্দা। দ্রুত তাঁদের পদত্যাগপত্র জেলা সভাপতি ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো হবে বলে বিক্ষুব্ধ নেতারা জানিয়েছেন। আগামী ১৪ মার্চ ময়নাগুড়ি টাউন ক্লাব ময়দানে সভা করতে আসছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে এক ঝাঁক তৃণমূল নেতার পদত্যাগের ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এ বিষয়ে সমীরণ চৌধুরী বলেন, ‘দলীয় পদে থাকলেও কোনও বৈঠকেই আমাকে ডাকা হয় না। বারংবার বলার পরেও জেলা কমিটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আমাকে যুক্ত করা হয়নি। দলের সিদ্ধান্তগুলি জানতে না পারায় সাংগঠনিক কাজে অসুবিধা হচ্ছিল। দলে আমাদের কোনও গুরুত্ব নেই। তাই পদ থেকে সরে যাচ্ছি।’ ময়নাগুড়িতে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা লগ্নের নেতা তথা বর্তমান কাউন্সিলার অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘দুই-একজন নেতার মর্জিতে দল চলছে। তাঁদের জন্য পুরসভার কাজও ঠিকমতো হচ্ছে না। আমার ওয়ার্ডের টেন্ডার কোনও অজ্ঞাত কারণে বারংবার বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডে আমার সম্মানহানি হচ্ছে। দল কোনও পদক্ষেপ করছে না। জেলা কমিটিতে থাকলেও আমি গুরুত্বহীন। তাই পদ ছাড়ছি।’
অপু রাউতের কথায়, ‘পুর নির্বাচনে কলকাতা থেকে ঘোষিত প্রার্থীতালিকায় আমার ও আমার স্ত্রীর নাম থাকলেও স্থানীয় কয়েকজন নেতার অমতে দুজনের কারও প্রার্থী হওয়া হয়নি। দলের টাউন কমিটির কোনও মিটিংই হয় না। নির্বাচন আসন্ন হলেও দলের কয়েকজন নেতার জন্য দল থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন সমর্থকরা। এখন অনেকেই আর কার্যালয়ে আসেন না। সাংগঠনিক কাজে আমাদের মতামত নেওয়া হয় না।’ সুশীল সরকার বলেন, ‘দলীয় পদাধিকারীদের কোনও গুরুত্ব নেই, তাই পদে থাকার মানে হয় না। পদ ছাড়ছি।’ শ্যামল দত্ত চিকিত্সার কাজে দক্ষিণ ভারত রয়েছেন। তিনি ফোনে জানান, ‘দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হোয়াটসঅ্যাপ মারফত পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেব।’
জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী মহুয়া গোপ বলেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার আগে এমন ঘটনা অনভিপ্রেত। ওই কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করব৷’