শিলিগুড়ি: চম্পাসারির হোটেলে দেহ ব্যবসার ঘটনায় লাগল রাজনীতির রং। হোটেল মালিক বিজয় জয়সওয়াল আরএসএস-এর সক্রিয় কর্মী বলে জানা গেছে। তিনি আরএসএস-এর শিলিগুড়ি বিভাগ সম্পর্ক প্রমুখ রাজেন শর্মার ঘনিষ্ট হিসেবেই পরিচিত। পরিচয় থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও রাজেনের দাবি, ‘দশটা অনুষ্ঠানে ডাকলে ও একটা অনুষ্ঠানে আসত। কোনও কার্যকর্তার পদে ছিল না।’ শুধু আরএসএস-এর সক্রিয় কর্মীই নয়, তৃণমূল নেতাদেরও ঘনিষ্ঠ বিজয়। তাঁর হোটেলে স্থানীয় ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন তৃণমূল নেতা নিয়মিত বৈঠক করতেন বলেও জানা গিয়েছে। যদিও কিসের সে বৈঠক? সে ব্যাপারে ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি মহম্মদ জহুরের সাফাই, ‘আমরা ওখানে রাজনৈতিক বৈঠক করতাম। তবে এখন আর করি না।’ ওই হোটেলে দেহব্যবসা চলার ব্যাপারটা জানা ছিল? জহুরের বক্তব্য, ‘শুনেছিলাম ওখানে এরকম কিছু হয়। তবে কিছু দেখিনি।’
ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তৃণমূলের দিলীপ বর্মনের টিপ্পনি, ‘কয়েকজন নেতা ওখানে বৈঠক করত। ওদের ওখানে দরকার আছে, আমার তো আর কোনও দরকার নেই। আমার অনুষ্ঠানে বিজয়ের কোনও জায়গা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়িক স্বার্থে ও তৃণমূলকে সাপোর্ট করত। বিজেপির তো বাজার নেই। আসলে অনেকেই আছে, যারা রাতে বিজেপি, দিনে তৃণমূল।’ ঘটনার পর থেকে এখনও উধাও বিজয়। মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসিপি সুভেন্দ্র কুমার বলছেন, ‘তদন্ত চলছে। তদন্তে ওঁর নাম এলে ওঁকেও গ্রেপ্তার করা হবে।’
বিজয়ের এই সখ্যতা অস্বস্তি বাড়িয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে। অস্বস্তি কাটাতে তৃণমূলের জেলা সভাপতি পাপিয়া ঘোষের বক্তব্য, ‘আমরা তো বিভিন্ন হোটেলেই বুকিং চার্জ দিয়ে বৈঠক করি। এবার থেকে ওই হোটেলে কেউ যাবে না।’ বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি অরুণ মণ্ডলের বক্তব্য, ‘সংঘ একটি স্বতন্ত্র সংগঠন। যাদের মূল কাজই সমাজসেবা। আমি ভারতীয় জনতা পার্টি করি। তাই আমি সংঘের কোনও ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারব না।’ ঘটনায় আরএসএস ও তৃণমূলের ‘অনৈতিক যোগসাজশ’ স্পষ্ট, বলে সরব হয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার। তিনি বলছেন, ‘চম্পাসারির এই ঘটনাই ফের একবার প্রমাণ করছে, আরএসএস ও তৃণমূল একসঙ্গে সবধরণের অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত।’ ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে শহরের সমস্ত মানুষের এব্যাপারে একসঙ্গে সরব হওয়া উচিত, আহ্বান জীবেশের।
বিজয়ের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা গিয়েছে, হোটেল তৈরির পর থেকেই বিজয়ের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসে। করোনার ঠিক আগে ওই হোটেল তিনি চালু করেছিলেন। হোটেল চালুর আগে গুরুংবস্তিতেই থাকতেন বিজয়। বিধান মার্কেটের একটি শাড়ির হোলসেল দোকানের রোজগারেই চলত সংসার। হোটেল তৈরির একবছরের মধ্যেই ফুলে ফেঁপে ওঠেন বিজয়। গুরুংবস্তি ছেড়ে বছরখানেক আগে চম্পাসারিতে ওই হোটেলের উলটো দিকের রাস্তাতেই বিলাসবহুল বাড়ি বানান তিনি। পুলিশি তদন্তে আরও উঠে এসেছে, হোটেল ম্যানেজার অতীশ কুমার খাসনবিশ ও বছর বাইশের পূর্ণিয়ার বাসিন্দা সুদর্শন কুমার হোটেলে ‘মেয়ে সাপ্লায়ার’ হিসেবে কাজ করত। ওই দু’জনকে পাঁচদিনের পুলিশি হেপাজতে নিয়ে আরও তথ্য বের করার চেষ্টা করছে প্রধান নগর থানার পুলিশ। রাজেনের দাবি, ‘আমরা কোনওদিন ওঁর বাড়িতে যাইনি। হোটেলেও কোনওদিন যাইনি।’