শামুকতলা: আলিপুরদুয়ার জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ষোলো বছরের এক কিশোরীকে মোটা টাকার উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে ভিনরাজ্যের পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন নারী পাচারকারী দলের এক এজেন্ট। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। শামুকতলা থানার পুলিশের একটি বিশেষ দল শনিবার মুম্বই থেকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে নিয়ে এল। ওই কিশোরীকে মুম্বই নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার মতলব ছিল পাচারকারীদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে কমবয়সি মেয়েদের পাচার করার চক্র সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ভিনরাজ্যে পাচার করার ঘটনাও ডুয়ার্সে ঘটছে মাঝেমধ্যেই।
ওই কিশোরীর পরিবারের লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে শামুকতলা থানায়। এরপরেই পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে ওই কিশোরীটিকে মুম্বই পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। একটি মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে পুলিশ মুম্বই থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। তবে পাচারকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের ধরা যায়নি। পুলিশ এই ঘটনায় পাচারকারী দলের দুই মহিলা এজেন্টের নাম পেয়েছে। তাদের খোঁজে জোর তল্লাশি শুরু হয়েছে। শামুকতলা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েটি একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। ছয়দিন ধরে তার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে বাড়ি থেকে বের হয় ওই কিশোরী। তারপর থেকে আর তার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্ভাব্য সব জায়গায় বাড়ির লোক খোঁজ করে না পেয়ে গত রবিবার সকালে শামুকতলা থানায় অভিযোগ করেন। তার একটি ছবিও থানায় জমা দেন বাড়ির লোকজন।
নিখোঁজ কিশোরীর মা জানিয়েছে, আমার মেয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ। আমরা ভেবেছিলাম, হয়তো কোনও বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছে। কিন্তু কোথাও না পেয়ে শামুকতলা থানার পুলিশের দ্বারস্থ হই। গত কয়েকদিন ধরে খুব দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছিলাম। দুশ্চিন্তা দূর হল।’
শামুকতলা থানার ওসি জগদীশ রায় জানান, শামুকতলা থানা এলাকার ১৬ বছরের ওই কিশোরী নিখোঁজের ঘটনায় আমাদের কাছে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। আমরা সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করি। তদন্তে নেমেই আমরা জানতে পারি মেয়েটিকে মুম্বই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপরেই পুলিশের একটি বিশেষ দল তৈরি করে মুম্বই পাঠানো হয়। মুম্বই স্টেশন থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। তবে পাচারকারীদের খোঁজ মেলেনি। আমরা তাদের ধরার চেষ্টা চালাচ্ছি।
নারী পাচার রোধে কাজ করেন সমাজকর্মী অসিত শিকদার। তিনি জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্বের সম্পর্ক করে কমবয়সি মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে পাচার করার চক্র সক্রিয় ডুয়ার্সে। এছাড়া মোটা টাকার মাইনের প্রলোভন দেখিয়ে ভিনরাজ্যে পাচার করার বেশ কয়েকটি চক্র ডুয়ার্সে। তারা চা বাগান এবং প্রত্যন্ত গ্রামের কমবয়সি মেয়েদের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ভিনরাজ্যে পাচার করে দেয়। এর আগে বেশ কিছু কিশোরীকে শামুকতলা থানার পুলিশ দিল্লি, হরিয়ানা, কাশ্মীর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে।
নারী পাচারের বিরুদ্ধে চা বাগান এবং প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে লাগাতার সচেতনতা মূলক কর্মসূচি চালাই। স্কুলগুলিতেও ব্লক প্রশাসন এবং শামুকতলা থানার সহযোগিতায় শিবির করি। এরপরেও এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। মানুষ সচেতন না হলে এটা বন্ধ করা যাবে না।