খোকন সাহা, বাগডোগরা: শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়কে এককথায় ‘মুদ্রাপাগল’ বললে ভুল হবে না। মাটিগাড়া রামকৃষ্ণপাড়ার এই মানুষটির সংগ্রহে এখনও পর্যন্ত রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্রাচীন মুদ্রা। প্রায় ২ হাজার বছরের প্রাচীন মুদ্রাও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। পেশায় ঘড়ির ব্যবসায়ী হলেও বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে মুদ্রা প্রদর্শন করে গবেষকদের সহায়তা করেন, আর এতেই তিনি তৃপ্ত হন। তাঁর পাগলামিকে সাফল্য বলেই মনে করেন শিবাজি।
শিবাজির কথায়, তিনি প্রায় ৮ বছর বয়সে হঠাৎই পুরোনো যুগের পয়সা, দেশ-বিদেশের মুদ্রা ও টাকা সংগ্রহ করতে শুরু করেন। সেই থেকে এখনও সংগ্রহ করে চলেছেন। আর তাঁর এই নিরলস পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসেবেই তিনি বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মুদ্রা পরিষদ, কলকাতা মুদ্রা পরিষদ ও দিল্লি রয়্যাল মুদ্রা পরিষদের আজীবন সদস্য। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ থেকে ভারতের প্রথম মুদ্রা। গান্ধার জনপদের মুদ্রা যা ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ মিউজিয়াম ও দিল্লির ন্যাশনাল মিউজিয়ামে দেখতে পাওয়া যায়। আড়াইশো বছরের পুরোনো ষোড়শ মহাজনপদ, কুষাণ যুগ, মৌর্য যুগ, গুপ্ত যুগ, পাল যুগ, সুংঙ্গ যুগ, ইন্দো-গ্রিক, আলেকজান্ডার, ইন্দো সাসানিয়ান, ইন্দো রোমান, দিল্লির শেষ হিন্দু রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহান, মুহম্মদ ঘোরি, দিল্লি সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি, ইলতুতমিস, সুলতানা রাজিয়া, ইব্রাহিম লোদী, মোগল সাম্রাজ্যের বাবর থেকে বাহাদুর শাহ জাফর পর্যন্ত ১৯ জন মোগল সম্রাটের মুদ্রা রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। এছাড়াও পর্তুগিজ-ইন্ডিয়া, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া, ফ্রেঞ্চ-ইন্ডিয়া, বাংলার নবাব, লখনউয়ের নবাব, কোচবিহার রাজা, অসমের রাজা, হায়দরাবাদের নিজাম, মারাঠা শিবাজি মহারাজ, মহীশূর রাজ্যের হায়দর আলি, টিপু সুলতান, গোয়ালিয়র, জয়পুর, বিকানের, বিজয়নগর সাম্রাজ্যের মুদ্রা, ইন্দোরের মুদ্রাও রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। পৃথিবীর সব থেকে ছোট স্বর্ণমুদ্রা, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনীর ডাকটিকিটের দেখা মিলবে তাঁর কাছে। বিশ্বের দুশোর বেশি দেশের টাকা-পয়সা রয়েছে মাটিগাড়ায় শিবাজির বাড়িতেই।
কীভাবে তাঁর এই সংগ্রহ গড়ে উঠেছে, সেব্যাপারে প্রশ্ন করলে শিবাজি জানালেন তাঁর পরিশ্রমের কথা। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে ঘুরে সেসব সংগ্রহ করেছেন। দ্বারস্থ হয়েছেন যাঁরা মুদ্রা সংগ্রহ করেন, তাঁদেরও। তিনি বলেন, ‘আমি প্রাচীন মুদ্রা নিয়ে গবেষণা করে যেতে চাই। পাশাপাশি যাঁরা গবেষণা করতে চান, তাঁদের সহায়তা করে যেতে চাই।’