শিলিগুড়ি ও কলকাতা: এবার বিদ্রোহ উত্তরের পাহাড়েও। সিকিমের শেয়ার ক্যাব নিয়ে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সমতলে, তার আঁচ পড়তে শুরু করেছে দার্জিলিংয়ে। শুধু শিলিগুড়ি নয়, দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়েও যে শেয়ার ক্যাব চালাবে সিকিম, তা স্পষ্ট হতেই রুটিরুজির প্রশ্ন উঠছে পাহাড়ে। সিকিমের গাড়ি পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র চলতে পারলে কেন এখানকার গাড়ি সিকিমের নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে যেতে পারবে না, তা নিয়েও চলছে তুমুল চর্চা। যাকে কেন্দ্র করে দুই রাজ্যের মধ্যে অচলাবস্থা তৈরির আশঙ্কা দানা বাঁধছে। এমন পরিস্থিতিতে ২৭ জুন বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে সমস্ত পরিবহণ সংগঠন এবং পর্যটন ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (এইচএইচটিডিএন)।
সিকিমের সিদ্ধান্তে উত্তরবঙ্গের একটা বড় অংশে যে ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে, সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হলেও, দুই রাজ্যের মধ্যে পরিবহণ সমস্যার সমাধান হতে চলেছে বলে দাবি করেছেন এরাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। উত্তরবঙ্গ সংবাদকে তিনি বলছেন, ‘পারস্পরিক ভিত্তিতে বাংলা ও প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমের মধ্যে মোট ১২ হাজার গাড়ি চলাচল করবে। এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে দু’রাজ্যের মধ্যে আলোচনা শুরু হচ্ছে।’ দু’রাজ্যের মধ্যে পরিবহণ চুক্তি অনুযায়ী, এখন ৩ হাজার করে মোট ৬ হাজার গাড়ি চলাচল করে। সেই সংখ্যা দ্বিগুণ করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে পরিবহণমন্ত্রীর দাবি।
সমতলের পর পাহাড়। শেয়ার ক্যাব নিয়ে ক্রমশই অবস্থান বদল করছে সিকিমের পরিবহণ দপ্তর। শিলিগুড়ি শহর, এনজেপি এবং বাগডোগরায় শেয়ার ক্যাব চালুর সিদ্ধান্তের কথা প্রথমে প্রকাশ্যে এসেছিল। এখন জানা যাচ্ছে, দার্জিলিং এবং কালিম্পং সহ পাহাড়ের বেশ কয়েকটি জায়গায় গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিকিম। লাক্সারি ছাড়াও যাত্রী ‘ধরতে’ বিভিন্ন গাড়ি চালানো হবে। যা অজানা নয় পাহাড়ের পরিবহণ ব্যবসায়ী এবং চালকদের। কার্যত এক অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। দার্জিলিংয়ের এক চালক বলছেন, ‘নামচি যাওয়ার পথে চারধাম থাকলেও আমাদের গাড়ি দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। রাবাংলায় বুদ্ধ মন্দিরের ক্ষেত্রেও একইরকম সমস্যায় পড়তে হয়। এখন সিকিম যদি গাড়ির সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় তবে তো আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’
দার্জিলিং অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রাভেল এজেন্টসের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ লামার বক্তব্য, ‘যা জানতে পারছি, তা হলে আমাদের অনেককেই সমস্যায় পড়তে হবে। কর্মহীন হতে হবে অনেককে। তবে দুই রাজ্যের মধ্যে আলোচনার মধ্যে দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করি।’ সমস্যার সমাধানে তাঁরা বৈঠক ডেকেছেন বলে জানান এইচএইচটিডিএনের ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন কমিটির তরফে জয়ন্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকলের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়ে সমাধানের রাস্তা খোঁজা হবে।’
এদিকে, পরিবহণমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘দু’রাজ্যের পরিবহণ চুক্তি অনুযায়ী পারস্পরিকভাবে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। আমাদের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গেও কথা হচ্ছে। গাড়ির সংখ্যা বাড়লে দু’রাজ্যে সংশ্লিষ্ট সব মহলের উপকার হবে।’ প্রতিবেশী রাজ্যের ‘শেয়ার ক্যাব’ চালু করার বিষয়টি নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যায় যেতে চাননি তিনি। খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান। তবে এব্যাপারে আপত্তি করার মতো কিছু দেখছেন না বলেই মন্তব্য করেছেন পরিবহণমন্ত্রী।