সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: মাধ্যমিকের পর উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকাতেও জায়গা পেল না শিলিগুড়ির(Siliguri) পড়ুয়ারা। বুধবার উচ্চমাধ্যমিকের(HS) ফল প্রকাশের পর থেকে শহরের স্কুলগুলোর পড়াশোনার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহল। সামাজিক মাধ্যমেও এনিয়ে অনেক পোস্ট চোখে পড়ছে। কেন শিলিগুড়ি বারবার রাজ্যের বোর্ডের পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে শিক্ষাবিদরা নানা যুক্তি খাড়া করছেন।
এরমধ্যে সবথেকে বেশি চর্চিত, ইংরাজিমাধ্যম(English Medium) স্কুলের প্রতি অভিভাবকদের ঝোঁক, বাংলামাধ্যম স্কুলে প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়াদের ভিড় এবং উচ্চস্তরে প্রবেশিকার পরীক্ষার জন্য নিজেদের তৈরি করতে বেশি সময় দেওয়ার মতো কারণ। অন্যদিকে, স্কুলগুলো পড়ুয়াদের অমনোযোগী হওয়াকে দায়ী করছে। যার ফলস্বরূপ আগামীতে সিবিএসই ও সিআইএসসিই’র মতো কেন্দ্রীয় বোর্ডের পরীক্ষায় শিলিগুড়ির পড়ুয়ারা মেধাতালিকায় জায়গা করে নিতে পারলেও রাজ্যের বোর্ডের পরীক্ষায় আরও পিছিয়ে পরার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শিলিগুড়ি বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অসীম মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘উচ্চবিত্ত ছাড়াও মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের সরকারি স্কুলে পড়ানোর প্রয়োজন বোধ করছেন না এখন। সরকারি স্কুলে পড়াশোনা হয় না, এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে। শহরে প্রচুর বেসরকারি ইংরেজিমাধ্যম স্কুল গড়ে উঠেছে। সেখানে তাঁরা সন্তানদের ভর্তি করছেন। দেখা যাচ্ছে, যেসব শহরে বেসরকারি স্কুলের সংখ্যা কম, সেখানকার সরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা ভালো ফল করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমত, শিক্ষিত সমাজ আর সরকারি স্কুলে বাচ্চাদের পড়ানোর তাগিদ অনুভব করেন না। দ্বিতীয়ত, সরকারি স্কুলে পাঠরতদের একটা বড় অংশ বিভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাই উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল নিয়ে তারা সেভাবে ভাবতে চায় না।’
গত বছর উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যের মেধাতালিকায় সেরা দশে জায়গা করে নিয়েছিল শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলের এক ছাত্রী। তবে এবছর মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় গার্লস হাইস্কুলের আশানুরূপ ফলাফল হয়নি। যা নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়াকে দায়ী করেছে। প্রধান শিক্ষিকা অত্যুহা বাগচীর কথায়, ‘ছাত্রীরা পাঠ্যবই ভালো করে পড়ছে না। বাড়ছে নোট নির্ভরশীলতা। তাছাড়া, পড়াশোনার থেকে বেশি মোবাইল ব্যবহার ও অন্য অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় কাটাচ্ছে। এসবের সরাসরি প্রভাব পরীক্ষার রেজাল্টে পড়ছে। ভালো করে পড়াশোনা করলে নিশ্চিতভাবে মেধাতালিকায় তারা জায়গা করে নিতে পারত।’
শিলিগুড়ি শহরে সরকারি মাধ্যম স্কুলগুলোতে সিংহভাগ পড়ুয়া আশপাশের এলাকা থেকে এসে ভর্তি হচ্ছে। তার মধ্যে অধিকাংশ ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার অর্থাৎ পরিবারের প্রথম সদস্য, যে স্কুলের গণ্ডিতে পা রেখেছে। হায়দরপাড়া বুদ্ধভারতী হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপনেন্দু নন্দী বললেন, ‘সরকারি স্কুলে ঠিকঠাক পড়াশোনা হচ্ছে কি না, সেটা দেখার কেউ নেই। বিদ্যালয় পরিদর্শকরা নিয়মিত নজরদারি চালান না। তাছাড়া বছরের অধিকাংশ সময় পরিলকল্পনাহীনভাবে ছুটি দিয়ে রাখা হয়। রাইট টু এডুকেশনে বলা রয়েছে, অন্ততপক্ষে দুশোদিন বিদ্যালয় খোলা রাখতে হবে। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের পাঠাতে চাইলেও স্কুল বন্ধ থাকে। যার ফলে ঠিক সময়ে সিলেবাস শেষ করা যায় না। আশানুরূপ হচ্ছে না পরীক্ষার ফল।’