রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়িতে (Siliguri) বিভিন্ন স্কুলে মিড–ডে মিলের (Mid-Day Meal) বরাদ্দ দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রাজ্যের অন্যান্য জেলায় সরাসরি মহকুমা শাসকের অফিস থেকেই মিড–ডে মিলের নিয়ন্ত্রণ হলেও শিলিগুড়িতে মহকুমা শাসকের অফিস থেকে চাল বরাদ্দের ফাইল নিয়মিতভাবে খাদ্য দপ্তর যায়। সেখান থেকে বিমল রায়ের (Bimal Roy) স্ত্রীর নামে চাল তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আমলে স্ত্রীর বকলমে বিমলকে মিড–ডে মিলের চাল সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এমনটাই অভিযোগ। শুধু তাই নয়, স্কুল কর্তৃপক্ষের সামনে চাল মেপে দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও সেটাও মানা হয় না। কাজেই এখানেও দুর্নীতির আশঙ্কা রয়েছে। স্কুলগুলির বক্তব্য, যা দিয়ে যায়, মুখ বুজে সেটাই মেনে নিতে হয়। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য শিলিগুড়ির মহকুমা শাসকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। দার্জিলিংয়ের খাদ্য নিয়ামক বিশ্বজিৎ বিশ্বাসও ফোন ধরেননি। বিমল সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বাম আমলেই শিলিগুড়িতে নন–ওয়ার্কার খাতে র্যাশন দুর্নীতির সূত্রপাত। বিমল নিজে র্যাশন ডিলার, স্ত্রীর নামে র্যাশন ডিস্ট্রিবিউটারের লাইসেন্স রয়েছে। এরই সঙ্গে চা বাগানের নন–ওয়ার্কার খাতের র্যাশন ব্যবস্থা ২০০৬ সালে যুক্ত হয়। বামেদের সৌজন্যে লক্ষাধিক ভুয়ো র্যাশন কার্ড বানিয়ে প্রতি মাসে সরকারি ভরতুকিতে সরবরাহ করা কোটি কোটি টাকার খাদ্যপণ্য চুরি করে বিক্রির কারবার চলেছে। এহেন র্যাশন মাফিয়াকেই ২০১১ সালে মিড–ডে মিলের চাল সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কিন্তু কীভাবে বিমল এই দায়িত্ব পান? সূত্রের খবর, সরকারি নিয়মে মহকুমা শাসক এবং বিডিওদের হাতেই মিড–ডে মিলের নিয়ন্ত্রণ থাকে। স্কুলের প্রয়োজন অনুযায়ী মহকুমা শাসকের অফিসে মিড–ডে মিল বিভাগ থেকে সমস্ত হিসাব রাখা হয় এবং স্কুলগুলিকে সেখান থেকেই বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই বরাদ্দের নথি নিয়ে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া অথবা রাজ্য খাদ্য দপ্তরের গুদাম থেকে সেই চাল সংগ্রহ করবে। কিন্তু জ্যোতিপ্রিয়র নির্দেশে শিলিগুড়িতে খাদ্য দপ্তরকে মাধ্যম করে বিমলের স্ত্রীর নামে মিড–ডে মিল সরবরাহের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ির একাধিক র্যাশন ডিলারের বক্তব্য, প্রথম দিকে মহকুমা শাসকের অফিস এবং বিডিও অফিস থেকে স্থানীয় ডিলারদের স্কুলে চাল সরবরাহের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয়।
ওই ব্যবসায়ী শিলিগুড়ি মহকুমায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, শিশুশিক্ষাকেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র মিলিয়ে প্রায় ৯২৭টি স্কুলে মিড–ডে মিলের চাল সরবরাহ করেন। অভিযোগ, নিয়ম থাকলেও কোনও স্কুলেই চালের বস্তা ওজন করে দেওয়া হয় না। ফলে ৫০ কেজির জায়গায় ৪০ কেজি থাকলেও কারও ধরার উপায় নেই। নকশালবাড়ির নন্দপ্রসাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নীতীশ ঘোষের বক্তব্য, ‘চাল মেপে দেওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের এখানে কোনও দিনই তা করা হয় না।’