ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি: স্থানীয় তৃণমূলিদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হল ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের পুরোনো তৃণমূল সভাপতিকে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিলিগুড়ি (Siliguri) পুরনিগমের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার পিংকি সাহার স্বামী বিবেকানন্দ সাহা। অভিযোগ, তিনি দলবল নিয়ে দলেরই দীর্ঘদিনের সভাপতি স্বপনকুমার দাসের জমিতে চড়াও হয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি ওই জমিতে তৃণমূলের (TMC) পতাকা লাগিয়ে দেন।
খবর পৌঁছায় মেয়র গৌতম দেবের (Goutam Deb) কানে। তিনি শিলিগুড়ি ৩ নম্বর টাউন কমিটির সভাপতি দুলাল দত্তকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন। তারপরই দুলালের নির্দেশে বিবেকানন্দ তাঁর দলবল নিয়ে সেখান থেকে চলে যান বলে জানিয়েছেন স্বপন। বিবেকানন্দের কাজকর্মকে সমর্থন করছেন না দুলাল। তাঁর কথায়, ‘যারা ওর বাড়িতে গিয়েছিল তারা দলকে জানাতে পারত। সরাসরি আইন নিজেদের হাতে নিয়ে স্বপনের বাড়িতে যাওয়া তো ঠিক হয়নি। প্রশাসন আছে, আইন আছে, ওরা ওই রাস্তায় যেতে পারত। ওইভাবে কাজ বন্ধ করা ঠিক হয়নি।’
আর স্বপন সম্পর্কে দুলালের মন্তব্য, ‘স্বপনবাবুর জমিতে তিনি একসময় তৃণমূলের অফিস ঘর বানিয়েছিলেন। এখন নিজের জমিতে বাড়ি করছেন। তিনি আমার কাছেও এসেছিলেন। আমি সব কাগজপত্র পুলিশ ও পুর কর্তৃপক্ষকে দেখাতে বলেছি।’ এদিকে ভক্তিনগর থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ওই ওয়ার্ডে স্বপন তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত মুখ। শিবরামপল্লিতে তাঁর বাড়ি রয়েছে। পেশায় ফোটোগ্রাফার স্বপনের বাড়ির পাশেই তাঁর ১ কাঠা ১২ ছটাক জমি রয়েছে। সম্প্রতি সেই জমিতে বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করেছে শিলিগুড়ি পুরনিগম। সেই পাশ করা প্ল্যান নিয়ে ডিসেম্বর মাসে ঘর তৈরি শুরু করেছেন স্বপন। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, গত শুক্রবার কাউন্সিলারের স্বামী দলবল নিয়ে হাজির হন। ওই জমি খাসজমি বলে দাবি করেন। তারপর সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝান্ডা লাগিয়ে দেন। স্বপন বলেন, ‘নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি আমার স্ত্রীকে ওরা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।’
এই ঘটনার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে। স্বপনের প্রশ্ন, ‘আমার ওই জমি যদি খাসজমি হয়, তবে তা অধিগ্রহণ করবে রাজ্য সরকার। তৃণমূল নেতারা কেন তার দখল নেবে?’
এদিকে অভিযোগ উড়িয়ে পেশায় শিক্ষক বিবেকানন্দের বক্তব্য, ‘এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ওই জমি, খাসজমি। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কাগজপত্র দিয়েছি, তদন্ত করে দেখার জন্য। জমির বাস্তব চিত্রটা কী, সেটা আমরা জানার চেষ্টা করছি।’ স্বামীর সুরে সুর মিলিয়ে ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলার পিংকি সাহাও জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন।
পুরো ঘটনায় ক্ষুব্ধ মেয়র। তিনি বর্তমানে দলীয় কর্মসূচিতে কলকাতায় রয়েছেন। টেলিফোনে এদিন বলেন, ‘আমি বিষয়টি শোনার পরেই দুলাল দত্তকে তা দেখার জন্য বলেছিলাম। শিলিগুড়ি ফিরে পুরো বিষয়টি দেখব।’