তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: একুশ শতকে প্রযুক্তি ছাড়া জীবন যেন অচল। যতই দিন যাচ্ছে, জীবনধারণের জন্য বাড়ছে প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা। সঙ্গে অধিকমাত্রায় বেড়ে গিয়েছে ব্যস্ততা। মানুষের জীবন হয়ে যাচ্ছে অনেক বেশি যান্ত্রিক। এই অতিযান্ত্রিকতা থেকে কীভাবে স্বস্তি পাওয়া যাবে, তার পাঠ দিচ্ছেন শিলিগুড়ির (Siliguri) লেকটাউনের বাসিন্দা বিশাল সরকার। গুগল, মাইক্রোসফট, সিসকো, আইবিএমের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কর্মীদের ‘হ্যাপি লাইফে’র পাঠ দিচ্ছেন এই পাবলিক স্পিকিং বিশেষজ্ঞ (Public speaking specialist)।
দিন-দিন কর্মব্যস্ততা যত বাড়ছে, সামাজিক জীবন থেকে ততই যেন দূরে সরে যাচ্ছেন মানুষ। ঘুম থেকে উঠেই স্মার্টফোনে ডুব। ই-মেল, হোয়াটসঅ্যাপে অনবরত টুংটাং শব্দে আসতেই থাকছে নোটিফিকেশন। সারাদিনের মধ্যে অনেকটা সময় যদি মেসেজ চেক করতে গিয়ে ব্যয় হয়, তাহলে মানুষের সামাজিক জীবন বলে আর থাকে কী! ঘুরেফিরে আবার সেই আগের দিনের স্ট্রেস। যার ফলে উধাও হেলদি লাইফস্টাইল।
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি (Multinational company) মানেই সেখানে ফটরফটর ইংরেজিতে কথা বলা জরুরি। কর্পোরেট জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে পোশাকে, কথাবার্তায় স্মার্টনেস নিয়ে আসা যেন সময়ের দাবি। এই জীবনে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতে অনেকের মধ্যেই দেখা দেয় ভয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব। এই ভয় কাটানোর রাস্তা বাতলে দিচ্ছেন শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলের এই প্রাক্তনী।
পালবিক স্পিকিং স্কিল এখন যে কোনও কাজের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। ভয় ও আত্মবিশ্বাসহীনতা কাটিয়ে নিজের স্পিকিং স্কিল উন্নত করার নিদান হিসেবে বিশাল বলছেন, ‘প্রতিদিন একটি করে বিষয়ে কথা বলে সেটা রেকর্ড করতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে অডিও স্টোরি শুনতে হবে। মেন্টরদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এই তিনটি বিষয় পাবলিক স্পিকিংয়ের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ ইতিমধ্যেই তাঁর লেখা ‘আই লাভ পাবলিক স্পিকিং’ বইটি পাঠকদের নজর কেড়েছে।
অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল, বর্তমানে যিনি আইটি সেক্টরের কর্মীদের পাবলিক স্পিকিংয়ের উপর পাঠ দিচ্ছেন, রীতিমতো বিশেষজ্ঞের পর্যায়ে চলে যাওয়া বিশাল নিজের ছাত্রজীবনে সেভাবে কারও সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা পেতেন। বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ার সময় ফাইনাল ইয়ারে এসে পাবলিক স্পিকিংয়ের উপর তাঁর আগ্রহ জন্মায়। তারপর থেকেই বিভিন্ন রকমের বই, জার্নাল ইত্যাদি পড়া শুরু করেন তিনি। সাহায্য নেন ইন্টারনেটের। এভাবেই নিজের কমিউনিকেশন স্কিল উন্নত করেন তিনি।
বর্তমানে শুধু ভারতবর্ষেই নয়, আমেরিকা থেকেও তাঁর ডাক আসে পাবলিক স্পিকিংয়ের উপর কর্মশালা করানোর জন্য। বিশাল বলছেন, ‘অনেকে ঠিকভাবে কথা বলতে না পারায় কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন। অথচ দেখা যায় তাঁর মধ্যে যোগ্যতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। আমি কর্মশালা করাতে গিয়ে এমন অনেককে দেখেছি যাঁরা ভালো ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন। কিন্তু যখনই তাঁকে অনেকের মধ্যে বলতে বলা হয়, তখন ভয়ে চুপসে যান। দুর্বল প্রেজেন্টেশনের ফলে কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। তার প্রভাব পড়ছে ব্যক্তিগত জীবনে।’ পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে শুধুমাত্র অসুবিধে নিয়ে সারাক্ষণ না ভেবে সমাধানের পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।