গৌরহরি দাস, কোচবিহার: কোচবিহারের বেতশিল্পীদের সুদিন ফিরছে। বেতশিল্পের (Cane Crafts of Cooch Behar) পীঠস্থান হিসাবে পরিচিত কোচবিহার-১ (Cooch Behar) ব্লকের ধলুয়াবাড়িতে গিয়ে এলাকার বেতশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে তেমনই চিত্র উঠে এসেছে। তাঁদের কথা অনুযায়ী, বর্তমানে রাজ্য সহ রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন মেলাতেও বেতের তৈরি পাটি বিক্রি হচ্ছে। এতে এই শিল্পের প্রচার ও প্রসার দুটোই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাটির বিক্রিও যেমন আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে, তেমনি এর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটাই। এরফলে আগের তুলনায় এই কুটিরশিল্পে লোকের সংখ্যাও দিন-দিন বাড়ছে। প্রবীণ বেতশিল্পী মাধাইলাল দত্তের কথায়, ‘৪০-৫০ বছর ধরে এই কাজ করে আসছি। বর্তমানে এই শিল্পের চাহিদা ও দাম দুটোই বেড়েছে। ধলুয়াবাড়িতে সোম ও বৃহস্পতি দু’দিন হাট বসে। ৪-৫ বছর আগে প্রতি হাটে ৪-৫ হাজার পাটি বিক্রি হত। এখন সেখানে প্রতি হাটে প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার পাটি বিক্রি হয়।’ পাটির দামও আগের থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে বেড়েছে বলেও তিনি জানান।
কোচবিহার জেলায় মানুষের জীবিকা বলতে মূলত কৃষিকাজ। বড় কোনও শিল্প এই জেলায় নেই বললেই চলে। যে কারণে কাজের খোঁজে প্রতিবছর এই জেলা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক ভিনরাজ্যে যান। এই অবস্থায় জেলার ধলুয়াবাড়ি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই একটা বড় অংশের মানুষ বেতশিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বর্তমানে প্রচার ও প্রসার বেড়ে যাওয়ায় এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরে এলাকার বহু মানুষ স্বনির্ভর হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। পাটি বুনতে বুনতে অরুণা দত্ত বলেন, ‘এখন রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় সরকারি মেলা হয়। তাতে পাটির প্রচার ও প্রসার দুটোই বেড়ে গিয়েছে।’
মূলত বেতের ছিলকা চেঁছে তা দিয়ে পাটি তৈরি করা হয়। গোটা ধলুয়াবাড়িজুড়ে প্রচুর বেতের বাগান রয়েছে। বাড়ির পুরুষেরা মূলত খেত থেকে সেই বেত কেটে নিয়ে আসেন। এরপর দা বা বঁটি দিয়ে বিশেষ প্রকারে সেগুলি থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধৈর্য ধরে ছিলকা বের করে দেন। আর এই ছিলকা দিয়েই নিপুণ হাতে বাড়ির মহিলারা পাটি বোনেন। তবে এই পাটির মধ্যে ভাগ রয়েছে। অর্থাৎ শীতলপাটি, মোটাপাটি সহ বিভিন্ন ধরনের পাটি তৈরি হয়। এগুলির মধ্যে শীতলপাটির কদর ও দাম সবথেকে বেশি। বেতশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বর্তমানে এখানকার বেতের তৈরি পাটি কলকাতা, দিল্লি, নবদ্বীপ, বিহার, অসম, ত্রিপুরা, মণিপুর, অরুণাচলপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে যায়। প্রতি হাটে বাইরে থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে পাটি কিনে নিয়ে যান। বেতশিল্পী লক্ষ্মীরানি দাসের কথায়, ‘এখন পাটি ছাড়াও বেতের এই ছিলকা দিয়ে বিভিন্ন রকমের ব্যাগ, জুতো, টুপি সহ নানা জিনিস তৈরি করছি। এতে এই শিল্পের আরও প্রসার ঘটছে।’