রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: হাসপাতালের মুখ থেকেই সারি সারি গাড়ির লাইন। বেশিরভাগ অ্যাম্বুল্যান্স (Ambulance), বাকি অন্যান্য যানবাহন। দিনের পর দিন হাসপাতালে গাড়ির দাপট এতটাই বাড়ছে যে, রোগীদের যাতায়াত মুশকিল হয়ে পড়ছে। এরপরেও প্রশাসন নির্বিকার। অভিযোগ, হাসপাতালের ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স থেকে শুরু করে সমস্ত গাড়ি ঢুকছে ভিতরে। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সচালকরা আবার এখান থেকে রোগী ও তাঁর পরিবারকে ফুসলিয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ জেলা হাসপাতালেও সক্রিয় দালালচক্র।
হাসপাতাল সুপার ডাঃ চন্দন ঘোষ সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, ‘হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স, অন্য গাড়ি পার্কিং করা উচিত নয়। বহুবার এসবের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে পুলিশকে বলা হয়েছে। দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে।’
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে (Siliguri Hospital) রোজ প্রচুর মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন। শহর শিলিগুড়ি (Siliguri) শুধু নয়, মাটিগাড়া, রাজগঞ্জ ব্লকের বিস্তীর্ণ অংশের পাশাপাশি মিলন মোড়, দেবীডাঙ্গা, সুকনা থেকেও বহু রোগী এখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য সকাল থেকে লাইন দেন। এছাড়া অন্তর্বিভাগেও প্রতিদিন পাঁচশোর বেশি রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা করান। তাঁদের পরিজনরাও হাসপাতালে আসেন।
কিন্তু হাসপাতালের ভিতরে এমনভাবে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স, শববাহী গাড়ি সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, যার জেরে হাসপাতালে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। এর পাশাপাশি বেসরকারি ছোট গাড়ি, টোটোগুলোও ইদানীং হাসপাতালের ভিতরেই দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। এর ফলে হাসপাতালের গেট থেকে শুরু করে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান পর্যন্ত চারদিকে শুধু গাড়ির লাইন। সাধারণ মানুষের যাতায়াতের রাস্তা পর্যন্ত থাকছে না।
কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি? রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে একাধিকবার বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স সহ অন্যান্য গাড়ির প্রয়োজন ছাড়া হাসপাতালে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, রোগীকে নামাতে অথবা হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি হাসপাতালে ঢুকবে। কাজ হয়ে গেলেই সেটাকে বের করে দেওয়া হবে।
তাহলে সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে না কেন? হাসপাতাল সুপারের দাবি, ‘নির্বাচনের জন্য পুলিশ কিছুটা কমেছে। যার ফলে এই বিষয়গুলো দেখা সম্ভব হচ্ছে না।’ অথচ বেশ কয়েকজন বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী সর্বক্ষণ বহির্বিভাগের বাইরে ডিউটি করছেন। তাঁদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
শুধু তাই নয়, হাসপাতাল থেকে রোগী ফুসলিয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার চক্র সক্রিয় হয়েছে। অভিযোগ, এই চক্রে অ্যাম্বুল্যান্সচালকদের সিংহভাগই যুক্ত। যে সমস্ত রোগীকে মেডিকেলে রেফার করা হয়, তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্সে নেওয়ার সময় রাস্তাতেই রোগীর পরিজনদের মগজধোলাই করেন চালকরা। মেডিকেলে না নিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে রোগীকে নিলে ভালো চিকিৎসা হবে, মেডিকেলে চিকিৎসা হয় না ইত্যাদি বোঝানো হয়। অনেকেই সেই কথা শুনে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে প্রচুর টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন।