শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ির (Siliguri) এক বাসিন্দার মোবাইল ফোনে হঠাৎই একটি হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) কল। তুলতেই ওপার বলল, ‘শিলিগুড়ি থানার এসআই অর্জুন সিং বলছি। মাদক কারবারিদের একটি দল ধরা পড়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ধৃতরা আপনার মেয়ের নামও নিচ্ছে।’ কৌশিক অবাক। তবে তাঁর অবাক হওয়ার তখন আরও বাকি। এবারে ওপারের দাবি, ‘একটি ফোন নম্বর দিচ্ছি। তাতে এখনই ৭৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিন। নইলে আপনার মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হবে।’ কৌশিক চমকে গেলেও ঘাবড়াননি। সটান শিলিগুড়ি থানায় ফোন করে জানতে পারেন, ওই নামে সেখানে কোনও এসআই–ই নেই। আর এই সূত্রেই গোটা বিষয়টিই যে ভুয়ো সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারেন।
সাইবার প্রতারণা নতুন কিছু নয়। তবে ‘নির্বিঘ্নে অপারেশন’ সারতে প্রতারকরা যেভাবে নিত্যনতুন উপায় খুঁজে বের করছে তা যথেষ্টই আশঙ্কার। সন্তান কোনও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে, এটা শুনলে কোন বাবা–মা’র না চিন্তা হয়? আর একেই হাতিয়ার করে মঙ্গলবার কৌশিক সহ শিলিগুড়ি শহরের অনেকের কাছেই প্রতারকদের হোয়াটসঅ্যাপ কল গিয়েছিল। ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে বলে আরেক অভিভাবকের কাছে এদিন এমনই হোয়াটসঅ্যাপ কল করা হয়েছিল। সেখানেও একটি ফোন নম্বর দিয়ে টাকা পাঠাতে বলা হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে এক্ষেত্রেও এক পুলিশ অফিসারের নাম দিয়ে ফোন করা হয়েছিল। চক্রটি অবশ্য শুধু শিলিগুড়িতেই আটকে নেই। দিনকয়েক আগে দুর্গাপুরের বাসিন্দা একজনের কাছেও এমন কল যায়। ফোনে তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘বড়সড়ো অপরাধ করায় আপনার মেয়েকে পুলিশ হেপাজতে রাখা হয়েছে।’ এমনকি, মেয়েকে মারধর করা হচ্ছে বলে জানিয়ে কান্নাকাটির আওয়াজও শোনানো হয়েছিল। তবে মেয়ে সেই সময় কাছেই থাকায় গোটা ঘটনাটিই যে ভুয়ো তা ওই ব্যক্তির বুঝতে সমস্যা হয়নি।
এদিকে, চক্রটি যেভাবে অভিভাবকদের নামের পাশাপাশি সন্তানরা কে কোন স্কুলের কোন ক্লাসে পড়ছে সে বিষয়ে তথ্য জোগাড় করছে তা তদন্তকারীদের যথেষ্টই চিন্তায় ফেলেছে। পাশাপাশি, কোন শহরে কোন থানা বেশি গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে তথ্যকেও এই চক্র বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। এমন নয় যে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশ বিষয়টি জানে না। তবে কেউ কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন। এদিন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার সি সুধাকরকে ফোন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করা হলেও কোনও উত্তর দেননি।