রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: এতদিন নলখাগড়ার জঙ্গল কেটে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয়রা, এবার পাখিদের আবাসস্থলেই আগুন ধরিয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। ঘটনাটি শিলিগুড়ির (Siliguri) পোড়াঝাড় (Porajhar) সংলগ্ন সোশ্যাল ফরেস্ট্রির জঙ্গল এলাকার। অভিযোগ, কেউ বা কারা এদিন আগুন ধরিয়ে দেয়। দিনের পর দিন এই ধরনের ঘটনা ঘটলেও বন দপ্তরের কোনও নজরদারি নেই। ফলে পরিযায়ী পাখিদের আবাসলস্থল এবং দুষ্কৃতীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল ফরেস্ট্রি ডিভিশনের ডিএফও বিদিশা বসাকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তঁার বক্তব্য, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ করে পদক্ষেপ করব।’
শিলিগুড়ির পোড়াঝাড় সংলগ্ন তিস্তার চর দখলমুক্ত করতে বছরতিনেক আগে বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়েছিল বন দপ্তর। সোশ্যাল ফরেস্ট্রি বিভাগের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় প্ল্যান্টেশন করা হয়েছিল। চারিদিকে কাঁটাতারের ঘেরা দেওয়া হয়েছিল। দেখভালের জন্যে দুটি টাওয়ার তৈরি করে সেখানে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু সেসব এখন আর কিছুই নেই। কাঁটাতারের বেড়া অনেকদিন আগেই উধাও হয়ে গিয়েছে। টাওয়ারও ভেঙে পড়েছে। যে দুজন কর্মীকে দেখভালের জন্যে রাখা হয়েছিল তাঁদেরও আর দেখা যায় না। তাই সোশ্যাল ফরেস্ট্রির ওই জঙ্গল এখন দুষ্কৃতীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
অভিযোগ, ডিজে বাজিয়ে পিকনিক চলে ওই এলাকায়। সন্ধ্যার পর থেকে বাইক এবং ছোট গাড়ি নিয়ে প্রতিদিনই কয়েকটি গ্রুপ ঢোকে ওই জঙ্গলে। এরপর সেখানে অসামাজিক কাজকর্ম হয় বলে অভিযোগ। ওই এলাকাতেই একপাশে রয়েছে সোশ্যাল ফরেস্ট্রির ওই জঙ্গল এবং একপাশে বন দপ্তরেরই ফাঁকা জায়গা। সেখানে রয়েছে বড় বড় ঘাস। সেখানেই বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখি আসে। বিশেষ করে লুপ্তপ্রায় ইয়েলো ব্রেস্টেড বান্টিং আসে এই এলাকাগুলিতে। অভিযোগ, ওই এলাকায় ঢুকে ঘাস এবং নলখাগড়া কেটে বিক্রি করে দেয় এলাকাবাসীর একাংশ। এসব আগে থেকেই চলছিল। সম্প্রতি এলাকায় পিকনিক পার্টিদের উৎপাত শুরু হয়েছে। জঙ্গলের মধ্যে উচ্চগ্রামে মাইক বাজিয়ে পিকনিকের (Picnic) পাশাপাশি চলছে মদ্যপানের আসর। এর জেরে পাখিরা কম আসছিল। এসবের মাঝেই মঙ্গলবার ওই ঘাসভূমিতে কেউ বা কারা আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এর জেরে প্রচুর পাখি এলাকা ছেড়ে চলে যায়। কয়েকটি পরিযায়ী পাখি মারাও গিয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ পরিবেশপ্রেমীরা। কেন বন দপ্তর বিষয়টির ওপর কোনও নজর দিচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তঁারা। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ঐরাবতের কর্ণধার অভিযান সাহার বক্তব্য, ‘ওই এলাকায় এখন একা ঢুকতে ভয় হয়। বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে এখানে। কিন্তু ধীরে ধীরে সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।’