তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: স্বপ্নপূরণ বোধ হয় একেই বলে। স্বপ্নপূরণ বলাটা বোধহয় ভুল বলা হল, বলা উচিত আবও বড় এক স্বপ্ন ডানা মেলল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ, মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ডিনার, যে কোনও সমস্যায় পাশে থাকার আশ্বাস… বৃহত্তর স্বপ্ন নয় তো আর কী! শিলিগুড়ির (Siliguri) ডাবগ্রাম নিবাসী অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Arijit Banerjee) জীবন এখন আলোয় ঝলমল। বাবা সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা কেয়া বন্দ্যোপাধ্যায় অসম্ভব খুশি। হওয়ারই কথা। সাফল্যের আকাশে সন্তানের এভাবে উত্তরণ, কোনও বাবা–মা খুশি না হয়ে পারেন!
পাখোয়াজ বাদনকে কেন্দ্র করে শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির এই পড়ুয়া কীভাবে বেড়ে উঠেছে তা উত্তরবঙ্গ খুব ভালোভাবেই জানে। উত্তরবঙ্গ সংবাদ বহুদিন ধরেই তার এই পথচলার সঙ্গী। সেই অরিজিৎ এক এক করে সাফল্যের মাইলস্টোন ছুঁয়েছে আর উত্তরের বুক গর্বে ফুলে উঠেছে। জি২০ সম্মেলনের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) অরিজিতের পাখোয়াজ বাদনে দারুণ মজেছিলেন। সেই যাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অরিজিতের কথা হয়নি। মঙ্গলবার সেই অভাব পূর্ণ করল। রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার (Rashtriya Bal Puraskar) প্রাপক ১৯ জন মেধাবী এদিন নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ভবনে সময় কাটাল। অরিজিৎ তাদেরই একজন। খোদ প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গ দিলেন।
জি২০ সম্মেলনের মঞ্চে অরিজিতের পাখোয়াজ বাদন মোদির পরিষ্কার মনে ছিল। অরিজিৎকে দেখে হেসে তিনি তার পাখোয়াজ বাদনের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। পশ্চিমবঙ্গের কোনও মন্দিরে পাখোয়াজ বাজানো হয় কি না বলে প্রশ্ন করেন। অরিজিতের কোনও মন্দিরে পাখোয়াজ বাজানোর অভিজ্ঞতা নেই। তবে রামকৃষ্ণ মিশনে সে যে পাখোয়াজ বাজিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছে তা প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে ভোলেনি। তিনি শাস্ত্রীয় সংগীত শোনেন কি না বলে অরিজিৎ মোদিকে পালটা প্রশ্ন করলে হাসিমুখে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর, ‘সময় পেলেই খুব শুনি। পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার সন্তুর বাদন আমার খুবই প্রিয়।’ পরে অরিজিৎদের সবার হাতে প্রধানমন্ত্রীর সই করা পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। আরও আছে। মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির (Smriti Irani) আমন্ত্রণে রাতে দিল্লির এক পাঁচতারা হোটেলে ‘শাহি ডিনার’। অরিজিতের উপরি পাওনা বলতে, স্মৃতি খুব ভালো বাংলা জানেন। দুজনের খোশগল্প জমতে সময় নেয়নি।
বাবা–মা দুজনেই এদিনও নয়াদিল্লিতে ছেলের সঙ্গী ছিলেন। গুরু মৃদঙ্গআচার্য পণ্ডিত গুরুদাস ঘোষের অবদানেই যে ছেলের এহেন উত্তরণ তা সঞ্জয় ও কেয়া বারে বারেই জানিয়েছেন। ২৬ জানুয়ারি নয়াদিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে শামিল হওয়ার পর অরিজিৎদের শিলিগুড়ি ফেরা হবে। অরিজিৎ অবশ্য এখন থেকেই ভবিষ্যতের লক্ষ্যে স্থির, ‘পাখোয়াজকে একদিন ঠিক আন্তর্জাতিক খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দেব।’