মিঠুন ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: রাত তখন ৯.১০। তিনবাত্তির একটি পেট্রোলপাম্পের উলটোদিকে প্রচুর ভিড়। সেই রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ থমকে গেলেন নিউ জলপাইগুড়ি থানার এক পুলিশ আধিকারিক। এত ভিড় দেখে তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন হয়তো কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কাছে এগোতেই জানতে পারলেন ভিড়টা আসলে মদের দোকানের। বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি সেই দোকান থেকে বেরিয়ে এসেই বললেন, ‘প্রথম জীবনে এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভিড় ঠেলে সিনেমার টিকিট কাটতাম।’
শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় লোকসভা ভোট (Lok Sabha Election 2024)। তার আগে জেলা মুখ্য নির্বাচনি আধিকারিক ও জেলা শাসকের নির্দেশে দার্জিলিং জেলায় বন্ধ করা হয়েছে সমস্ত মদের দোকান। নির্দেশ অনুযায়ী, ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যা ছ’টার পর থেকে জেলার সমস্ত মদের দোকান বন্ধ রয়েছে। ২৭ তারিখ অর্থাৎ শনিবার থেকে পুনরায় দোকান চালু করা যাবে বলে খবর। শিলিগুড়ি (Siliguri) শহরের বেশিরভাগ মদের দোকান বন্ধ। আর এই সুযোগে বৃহস্পতিবার শহরের জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্গত মদের দোকানগুলিতে এখন পা ফেলার জায়গা নেই। চলছে রমরমা ব্যবসা। এমনকি বহু জায়গায় অবৈধ মদের কারবারও লক্ষ্য করা গিয়েছে।
গত দু’দিন ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছে ইস্টার্ন বাইপাস, নিউ জলপাইগুড়ি, তিনবাত্তি ও ফুলবাড়ির বিভিন্ন মদের দোকানের সামনে। সূর্য সেন কলোনির বাসিন্দা স্নিগ্ধা বসাক কটাক্ষ করে বলেই ফেললেন, ‘ওদের মনে হয় মদ না খেলে চলবেই না। এটাই বুঝি জীবনের একমাত্র লক্ষ!’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউ জলপাইগুড়ির ভক্তিনগর এলাকায় মদের দোকান বন্ধ ছিল। দোকানের সামনে উঁকিঝুঁকি মারলে এক ব্যক্তি এগিয়ে বললেন, ‘দাদা হবে, হবে। কী লাগবে বলুন।’
এদিন দুপুরে সূর্য সেন কলোনির মোড় বাজার এলাকার একটি মাঠে মদের আসর লক্ষ্য করা গিয়েছে। স্থানীয় লোকনাথ মন্দির ও মোড় বাজারের মাঝে রয়েছে একটি বড় মাঠ। বেশকিছু গাছ রয়েছে এখানে। একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে চার-পাঁচজন তরুণ মদ্যপানে ব্যস্ত ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তাঁরা সকলেই হাকিমপাড়া ও রবীন্দ্রনগর এলাকার বাসিন্দা। এক সুরাপ্রেমীর কথায়, ‘আমাদের এলাকায় দু’তিনদিন দোকান বন্ধ থাকবে। খোলাবাজারে যেগুলো বিক্রি হয়, তার বেশিরভাগই ভেজাল। সেই কারণে একটু দূরে আসা।’
একইরকমভাবে এদিন ফুলবাড়ির হোটেল-রেস্তোরাঁগুলিতে প্রধাননগর, মাটিগাড়া এলাকার অনেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন বলে খবর। যদিও কয়েকটি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বসে মদ্যপানের নিয়ম নেই বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, এদিন সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি জংশন এলাকার একটি বন্ধ মদের দোকানের পাশে ব্যাগে করে এক ব্যক্তিকে মদ বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে। সব মিলিয়ে তীব্র গরমের মধ্যেও মদের বাজার ঠান্ডা হয়নি।