সানি সরকার, শিলিগুড়ি: বিষ্ণুপুর থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব যতটা, বিজেপির রাজনৈতিক পরিসরের পার্থক্য যেন তেমনই।শিলিগুড়িতে বিজেপির শক্তি অনেকটাই নির্ভরশীল সংগঠনের ওপর। কিন্তু বিষ্ণুপুরে সংগঠন থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিবিশেষ হয়ে দাঁড়ায়। তফাত রয়েছে শহর এবং গ্রামের রাজনীতিরও। কিন্তু শিলিগুড়ি এবং বিষ্ণুপুরে কার্যত একই ভূমিকায় পারমিতা রায়চৌধুরী। মহানন্দা পারের শহরের রাজনীতিতে অতিপরিচিত নাম।
শিলিগুড়িতে থাকাকালীন বিজেপির তখনকার শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরীকে নানাভাবে উৎসাহিত করতেন পারমিতা। এখন তিনি লোকসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁর ‘মেন্টর’। পারমিতার মাধ্যমেই কিন্তু শিলিগুড়ি এবং বিষ্ণুপুরের মধ্যে এক যোগসূত্র তৈরি হয়েছে। পারমিতার স্বামী আসলে সৌমিত্র।
পারমিতার দাবি, ‘সৌমিত্রর প্রচারে কোনওভাবেই আমি যুক্ত হচ্ছি না। হতে চাইও না। চাই না তৃণমূলের হাতে কোনও অস্ত্র তুলে দিতে। তবে বলতে পারি তৃণমূল যত বেশি কুৎসা করবে ততই সৌমিত্রর জয় নিশ্চিত হবে।’ এই সূত্র ধরেই সৌমিত্রর মন্তব্য, ‘আমি চাই বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিষ্ণুপুরে প্রচারে আসুন। তাঁরা যতবার আসবেন, ২৫ হাজার করে ততবার আমার ভোটবৃদ্ধি ঘটবে। বিষ্ণুপুরের মানুষ কুৎসাকে কখনোই মান্যতা দেয় না।’
সৌমিত্রর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করেছে তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডলকে। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে কম আলোচনা নেই। এই প্রসঙ্গে নতুন করে সামনে চলে এসেছে শিলিগুড়ির পারমিতার নাম। বর্তমানে তিনি বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা। একসময় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পারমিতা। সেই সুবাদেই অভিজিতের সঙ্গে পরিচয়, প্রেম এবং বিয়ে। অভিজিৎ কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁরও মতাদর্শের পরিবর্তন ঘটে। অভিজিতের রাজনৈতিক উত্থানের পিছনে পারমিতার অবদান কম নয়। কিন্তু বিজেপির জেলা সভাপতি থাকাকালীন পথ দুর্ঘটনায় অভিজিৎ মারা যান। শিলিগুড়ির রাজনীতির একটি সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটে।
এরপর মহানন্দা-বালাসন দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। গত বছর সৌমিত্রকে বিয়ে করেছেন পারমিতা। তিনি এখন সৌমিত্রর রাজনৈতিক গড় সামলাচ্ছেন। কীভাবে প্রচার করতে হবে, মানুষের কাছে যেতে হবে, উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে হবে, কুৎসার জবাব দিতে হবে, তিনি নাকি ‘টিপস’ দিচ্ছেন সৌমিত্রকে। যদিও পারমিতার বক্তব্য, ‘রাজনীতিতে সৌমিত্র অনেক বেশি প্রাজ্ঞ। আমার পরামর্শ দেওয়ার কোনও প্রয়োজন পড়ছে না। বরং রাজনীতি থেকে আমি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখছি।’ এমন দাবি করলেও কুৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্নজনের ধারণা ভিন্ন। তবে আমি মনে করি জায়গাটা সম্মানের, বিশ্বাসের। সেই বিশ্বাস এবং সম্মানটা ধরে রাখছি।’
শহর শিলিগুড়ি অনেক দূর হতে পারে বিষ্ণুপুরের। তবু পারমিতার জন্যই শিলিগুড়ির অনেকে খোঁজ রাখছেন বিষ্ণুপুরের হালহকিকতের।