বর্ধমান: নদী থেকে বালি চুরি নতুন কোনও ঘটনা নয়। তবে এবার শুরু হয়েছে পুকুর চুরি। সংস্কারের নামে ভারী ভারী যন্ত্র দিয়ে গভীরভাবে পুকুর খুঁড়ে বালি তুলে চলছে পাচার। বালি তুলে অগণিত ডাম্পারে লোড করে পাচারের ঘটনা দেখেও নিশ্চুপ প্রশাসনের কর্তারা। আর তা নিয়েই ক্ষোভে ফুঁসছেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার আঝাপুর গ্রামের বহু বাসিন্দা। তাঁদের আশঙ্কা অবৈজ্ঞনিকভাবে পুকুরে গভীরতা তৈরি করে বালি তুলে নেওয়ার কারণে যে কোনও সময় গ্রামে ভূমিধস নামতে পারে।
আঝাপুর গ্রামে ’দুই সতীন’ নামের বিশাল আয়তনের একটি পুকুর রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের কথা অনুযায়ী, এক সময়ে আঝাপুরের মিত্র পরিবারই ছিল গোটা পুকুরটির মালিক। পরে এলাকার সিংহরায় পরিবার পুকুরটির অংশ কেনে। তবে শরিকি দ্বন্দ্বে দীর্ঘদিন পুকুরটির কোনও সংস্কার হয়নি। পুকুরটি মজে পড়েছিল। সম্প্রতি সিংহরায় পরিবার কৃষিকাজের সুবিধার জন্য পুরো পুকুরটি সংস্কার করতে চেয়ে আঝাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে আবেদন জানান। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ গত ২৬ মে সেই আবেদন মঞ্জুর করলেও বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করে দেয়। আঝাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ আবেদনকারী সিংহরায় পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দেয়, সরকারি সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে নিজ উদ্যোগে পুকুর সংস্কার করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে নিয়ম কানুনের কোনও তোয়াক্কা না করেই পুকুর কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর কথায়, নিজ উদ্যোগের পরিবর্তে সিংহরায় পরিবারের চার সদস্য আবার পুকুর সংস্কারের দায়িত্ব দেয় সুব্রত ঘোষ এবং অলোক ঘোষ নামে গ্রামের দুই ব্যক্তিকে। ওই দুই ব্যক্তি আবার জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজে যুক্ত একটি বেসরকারি সংস্থাকে পুকুরটি কাটানোর বরাত দেয়। ওই বেসরকারি সংস্থা পুকুর কাটার কাজ শুরু করতেই দুশ্চিন্তার পারদ চড়তে শুরু করেছে পুকুরটির আশেপাশের বাসিন্দাদের।
ভারী ভারী যন্ত্র পুকুরে নামিয়ে প্রথমে গভীরভাবে মাটি খুঁড়ে তুলে তা ডাম্পারে লোড করে নিয়ে যায় ওই বেসরকারি সংস্থা। তারপরেও অব্যাহত রয়েছে খনন কাজ। এইভাবে কয়েকদিন ধরে খনন কাজ চলায় পুকুরের অতি গভীর গর্ত থেকে মাটির পরিবর্তে সিলভার স্যান্ড অর্থাৎ সিলভার রঙের বালি স্তর বেরিরে পড়ে। বিগত ৪-৫ দিন ধরে অগণিত ডাম্পারে সেই সিলভার স্যান্ড লোড করে নিয়ে চলে যাচ্ছে ওই বেসরকারী সংস্থার লোকজন। আর সিলভার স্যান্ড পাচারে বিরাম না পড়াতেই বাড়ছে আতঙ্ক।
যদিও সুব্রত ঘোষ জানান, আঝাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ও ব্লকের ভূমি দপ্তরের অনুমতি নিয়েই তাঁরা পুকুর কাটাচ্ছেন। আর ব্লকের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক প্রত্যুষ বাগ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজে যুক্ত একটি সংস্থা পুকুরটি খুঁড়তে চেয়ে আবেদন করেছিল। কিন্তু এনওসি নিয়ে সমস্যা থাকায় তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও ওই জায়গার গভীর স্তরে থাকা বালি তুলে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়াটা বেআইনি কাজ হয়েছে। আঝাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক ঘোষ বলেন, ‘পঞ্চায়েতের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী পুকুরটির সংস্কার কাজ হচ্ছে না। এই কাজ যাতে বন্ধ হয় সেটা আমরা দেখছি।‘ বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ‘এমন ঘটনার কথা জানা ছিল না। এই বিষয়ে সবিস্তার খোঁজ খবর নেব। অভিযোগ সত্যি হলে বিএলএলআরও-কে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।‘