প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: দলীয় মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াইয়ে প্রস্তুত সবাই। দেশে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে সমস্ত বিরোধী শিবির। কিন্তু এই সময় যদি বাংলাতেও একই ঘটনা ঘটে, শাসকতন্ত্রের হাতে যদি গণতন্ত্র বিপন্ন হয়, তবে বামেরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, এক সুরে সেখানে প্রতিবাদ জানানো হবে। সোমবার নয়াদিল্লিতে দু’দিনের পলিটব্যুরো বৈঠকের শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই বার্তা দিলেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
প্রসঙ্গত, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে সমস্ত বিরোধীরা। পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে অধিবেশন, একত্রে বৈঠকও। তাৎপর্যপূর্ণভাবে পাটনায় সদ্য সমাপ্ত বিরোধী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদি সরকারকে সমূলে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে এক হয়ে পথ হাঁটবে দেশের তাবড় বিরোধী দলগুলি। পাটনাতেই আলোচনা হয় বিজেপি বিরোধী মহাজোট গঠন করে ‘একের বিরুদ্ধে এক’ ফর্মুলায় বিরোধী শিবিরের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে। বিরোধীদের পরবর্তী সিমলা বৈঠকে এই বিষয়ে আরও আলোচনা হবে, স্থির হয় পাটনার বৈঠকেই। এই পরিস্থিতিতেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলে সিপিএমের নীতি কী হবে? পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের দোস্তি আর তৃণমূলের সঙ্গে কুস্তি, অন্যদিকে কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গেই সিপিএমের কুস্তি৷ এই পরিস্থিতিতে ঠিক কোন নীতি নিয়ে এগোনোর কথা ভাবছে সিপিএম?
সোমবার নয়াদিল্লিতে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি দাবি করেন, ‘লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে রাজ্য ভিত্তিক আলাদা রণকৌশল স্থির করবে দল।’ এ প্রসঙ্গেই ইয়েচুরির অভিযোগ, ‘পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র বলে কিছু মাত্র অবশিষ্ট নেই।’ এই মর্মেই তাঁর সংযোজন, ‘আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াইয়ের কথা ভাবছি, দেশে গণতন্ত্র রক্ষার কথা ভাবছি। সেই সময়ে বাংলায় গণতন্ত্র সুরক্ষিত না থাকলে আমাদের সেখানেও প্রতিবাদে শামিল হতে হবে। ইতিমধ্যেই ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বাংলায়। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে এই সন্ত্রাসের জন্য দায়ী পশ্চিমবঙ্গ সরকার।’
সীতারামের বক্তব্য, ‘বিজেপি যেভাবে দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে, বাংলাতেও একইভাবে তৃণমূলও সেই একই কাজ করছে।’ তবে এক্ষেত্রে ইয়েচুরির পর্যবেক্ষণ, সিপিএমের লড়াই কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধেই। তবে যদি কোনও রাজ্যে কোনও দল বিজেপির মতো অভিপ্রায় নিয়ে চলে, তাহলে সিপিএম তাদের বিরুদ্ধেও আপ্রাণ লড়বে। সিপিএম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বললেন, ‘বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূর করতে, জাতীয় রাজনীতিতে যে দলই একসঙ্গে আসতে চায়, তাদের স্বাগত। তবে কোন রাজ্যে কোন দল কী করবে, সেটি তারা ঠিক করবে।’
উল্লেখ্য, পাটনার বিরোধী বৈঠকের সূত্র ধরেই এবার দেশে সর্বাত্মক বিজেপি বিরোধী আন্দোলন গড়ার ডাক দিল সিপিএম। সোমবার নয়াদিল্লিতে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি দলের নীতি নির্ধারক পলিটব্যুরোতে গৃহীত এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বলে সূত্রের দাবি। ২০২৪ লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে পাটনার বৈঠকে একসঙ্গে পথ চলার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর এবার সিপিএম চাইছে বিরোধী দলগুলির সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র মোদি সরকার বিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করা হোক। এই মর্মে আগামী মাসে সিমলার বৈঠকে আলোচনার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে আভাস দিয়েছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, ‘বিরোধী দলগুলির প্রত্যেকের এখন প্রধান দায়িত্ব হল দেশভক্তির পরিচয় দিয়ে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসা।’ একইসঙ্গে সীতারাম স্পষ্ট করেছেন, সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী মহাজোটে তাঁরা শামিল হলেও দেশের বিভিন্ন রাজ্যস্তরের বাস্তবিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সেখানকার জন্য আলাদা রণকৌশল তৈরি করবে তাদের দল। এই ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধিতার কথা মাথায় রাখলেও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দলের স্বার্থের দিকটিও যে তাঁরা খতিয়ে দেখবেন সেকথা ঠারে ঠারে জানিয়েছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি৷