গাজোল: কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। কিন্তু তার বাইরেও অনেক গ্রামীণ লোকাচার ছড়িয়ে রয়েছে গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে। তেমনই এক লোকাচার গাজোলের হরিদাস গ্রামের সোনামুখী চামুন্ডা কালীপুজো। কতদিন ধরে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে তা বলতে পারলেন না গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তিও। তবে তাঁর মতামত, ‘বাপ ঠাকুরদার মুখ থেকে শুনে আসছি এই পুজোর কথা। সেই হিসেবে কম করে ৪০০ বছরের পুরোনো এই পুজো।’ গ্রামের এক প্রান্তে গাছ গাছালিতে ভরা বেশ কিছু জায়গা। অন্যান্য গাছপালার পাশাপাশি সেখানে রয়েছে প্রকাণ্ড মাপের এক বহেড়া গাছ। সেই গাছের নীচেই পুজো হয় চামুন্ডা কালীর। পাশে রয়েছে আড়াইডাঙার কালী। এছাড়াও আছে শিবের ধান। পীরের একটি থানও রয়েছে এখানে। অন্যান্য দেবদেবীর সঙ্গে এখানে পীরেরও আরাধনা করা হয়।
এদিন বিকেলে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল প্রচুর মানুষ জড়ো হয়েছেন সেখানে। অনেকেই ভোগের ডালা নিয়ে এসেছেন। যাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ হয়েছে তাঁরা পাঁঠা নিয়ে এসেছেন উৎসর্গ করার জন্য। অনেকে নিয়ে এসেছেন পায়রাও। গোটা এলাকায় ঢাক ঢোলের আওয়াজ আর ধূপ-ধুনোর গন্ধ।
পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য প্রদীপ মণ্ডলের কথায়, ‘হরিদাস গ্রাম পুজো কমিটির উদ্যোগে এখানে সোনামুখী চামুন্ডা কালীর পুজো হয়ে আসছে। কয়েকশো বছরের পুরোনো যে বহেড়া গাছ রয়েছে সেই গাছকেই দেবী হিসেবে পুজো করা হয়। তবে এই গাছের বিশেষত্ব একটাই, এই গাছের কোনও ফল হয় না। এখানে কোনও মূর্তি পুজো হয় না। বিভিন্ন জায়গায় মায়ের মুখা লাগানো হয়। সেগুলোকেই দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়। চামুন্ডা কালীর পাশাপাশি আড়াই ডাঙার কালী, সন্ন্যাসী ঠাকুর, শিব ঠাকুর এবং পীরের পুজো এখানে হয়ে থাকে। প্রতি বছর অগ্রহায়ন মাসের প্রথম শনি অথবা মঙ্গলবার এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।’
অপর এক সদস্য বিকাশ সরকার বলেন, ‘আবহমান কাল ধরে গাছের নীচেই মায়ের পুজো হয়ে আসছে। তবে মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমরা একটি নতুন মন্দির তৈরি করেছি। পুজোকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম চন্ডীমঙ্গল কাব্য, খন পালাগান এবং ভাওয়াইয়া গান। এলাকার মানুষেরা যথাসাধ্য দান করে থাকেন। সেই দানের ওপর ভিত্তি করেই এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। শুধু এই গ্রাম নয়, বাইরে থেকেও প্রচুর ভক্ত আসেন।’