পুণ্ডিবাড়ি: বাবা-মা পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন। আর তাই দীনবন্ধু বর্মন ১০-১২ বছর বয়সেই গোপালপুরের ইকরচালা গ্রাম ছেড়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন। সেই দীনবন্ধুই যে আজ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার ছায়াসঙ্গী তা এলাকার অনেকেরই জানা ছিল না। সোজা দিল্লি থেকে উড়ানে বাগডোগরায় নামার পর সড়কপথে মঙ্গলবার বেলা ১টা নাগাদ তিনি ইকরচালা গ্রামে দীনবন্ধুর বাড়িতে পৌঁছানোর পর সবাই অবাক। উপলক্ষ্য বলতে দীনবন্ধুর বৌভাতের অনুষ্ঠান। লোকসভার স্পিকারের উপস্থিতিতে সেই অনুষ্ঠানের আনন্দ এদিন বেড়ে হয়েছিল দ্বিগুণ।
দীনবন্ধু কীভাবে স্পিকারের কাছের মানুষ হয়ে উঠলেন? বাবা সুশীল বর্মন বলে চলেন, ‘একটা সময় আমরা রাজস্থানে শ্রমিকের কাজ করতাম। ছেলে দীনবন্ধুর যখন ১০–১২ বছর বয়স ও রাজস্থানের একটি হস্টেলে রান্নার কাজ করত। এক বন্ধুর মাধ্যমেই পরবর্তীতে ও ওম বিড়লার বাড়িতে থাকতে শুরু করে। তিনি সেই সময় বিধায়ক। সেই শুরু। পরে ও কীভাবে যে সাহেবের ছেলেই হয়ে উঠল। সেই সম্পর্কের আজ ১৭–১৮ বছর হয়ে গেল। ছেলে আজকাল দিল্লিতে সংসদ ভবনেই থাকে।’
এলাকার লোকজনের সেভাবে জানা না থাকলেও কে কী কারণে এই অনুষ্ঠানবাড়িতে আসছেন তা পরিবারের সদস্যদের বিলক্ষণ জানা ছিল। আর তাই সকাল থেকেই সাজোসাজো রব। প্রাণপ্রিয় স্যারের আতিথেয়তায় যাতে কোনও খামতি না থাকে তাই বরকেই উদ্যোগ হতে দেখা গেল। বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের একাংশের মধ্যে দীনবন্ধু দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছিলেন। লোকসভার স্পিকার অনুষ্ঠানবাড়িতে পৌঁছাতেই তাঁকে ফুলের মালা পরিয়ে বৈরাতি নাচে স্বাগত জানানো হল। দীনবন্ধু ও নববধূকে আশীর্বাদ করার পর ওম পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেশ গল্পে মাতলেন। স্পিকারের খাওয়াদাওয়ার জন্য স্পেশাল মেনু হিসেবে ছিল গ্রিন স্যালাড, ফ্রুট স্যালাড, ফ্রায়েড রাইস, বাসন্তী পোলাও, পটল ভাপা, এঁচোর কষা ও ফ্রুট চাটনি।
অনুষ্ঠানবাড়িতে পৌঁছানোর পরই তার আগে অবশ্য ওমের হাতে ড্রাই ফ্রুট ও কুকিজ তুলে দেওয়া হয়েছিল। পার্শ্ববর্তী মরানদীর কুঠি গ্রামের বাসিন্দা কোচবিহারের এক নামী হোটেলের শেফ অরুণ বর্মন এদিন এই স্পেশাল মেনুর দায়িত্বে ছিলেন। বললেন, ‘এমন একজনকে রান্না করে খাইয়ে দারুণ লাগল।’
লোকসভা স্পিকার আসবেন জেনে এলাকার প্রধান মাধবী রায়, উপপ্রধান সুব্রত চকদার প্রমুখ অনুষ্ঠানবাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সময়মতো রাস্তায় বালি–পাথর বিছানোর ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। স্পিকার এদিন ফেরার সময় প্রধানকে ডেকে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন।
নতুন বিয়ে হলে যে কেউই প্রথম প্রথম ‘সেলেব্রিটি’। অনুষ্ঠানবাড়িতে লোকসভার স্পিকারের আগমনের সূত্রে দীনবন্ধু এদিন যেন ‘ডাবল সেলেব্রিটি’। প্রতিবেশী মিঠুন রায়, দীপক দাসরা হতবাক, ‘এত বড় একজন মানুষের সঙ্গে যে আমাদের দীনবন্ধুর রোজকার ওঠবোস তা আমরা কেউই জানতাম না।’ শুনে দীনবন্ধু যেন লাজে লাল।