নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় সরকার ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশনের ডাক দিতেই নানা জল্পনা উঁকি দিতে শুরু করেছে বিরোধী শিবিরে। মাত্র কয়েকদিন আগেই শেষ হয়েছে সংসদের বাদল অধিবেশন। এখন ফের সংসদের অধিবেশন ডাকার কারণ আঁচ করতে পারছেন না কেউই। এদিন টুইটারে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রল্হাদ যোশির সরকারি ঘোষণার পরে রাজধানী দিল্লির রাজনৈতিক অলিন্দে প্রশ্ন উঠছে, তবে কী এক দেশ-এক ভোট এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মত বিশেষ কয়েকটি বিল পাসের লক্ষেই এই ভাবে আয়োজন করা হচ্ছে বিশেষ সংসদীয় অধিবেশন? নাকি সরকার আগাম নির্বাচনের পথে হাঁটার লক্ষ্যে অধিবেশন ডেকে কার্যকালীন পরিসমাপ্তি ঘটাতে চাইছে? নাকি অন্য কোনও প্রস্তাবনা নিয়ে আসতে চাইছে সরকার?
উল্লেখ্য, বিগত কয়েক দিন ধরেই ‘এক দেশ-এক নির্বাচন’ প্রথা চালু করার চিন্তাভাবনা নিয়ে এগোচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ বিশেষ সংসদীয় অধিবেশনের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে ‘এক দেশ-এক নির্বাচন’ নীতি নিয়ে৷ রাজনৈতিক মহলের একাংশ এও মনে করছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি তড়িঘড়ি লাগু করবার উদ্দেশ্যে সংসদীয় পরিসরে তা পাস করানোর উদ্দেশ্যে ডাকা হয়েছে এই ‘মিনি’ অধিবেশন। লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘না কোনও বুলেটিন, না কোনও নোটিস, না ফোন, বিরোধীদের কিছুই জানানো হয়নি। এখন দেখছি টুইটারেই চলছে নতুন সরকার৷ মনে হচ্ছে নতুন সংসদ ভবনে নিজের কৃতিত্বের ঢাক বাজাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷’ তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ জহর সরকার বলেন, ‘যা ইচ্ছে তাই শুরু করেছে কেন্দ্র সরকার। বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা নেই, নেই কোনও পরামর্শ, কী কী এজেণ্ডা জানা যায়নি তাও। অথচ আবারও অধিবেশন ডাকা হয়েছে। এখন কোনও ডিটেকটিভ বা জ্যোতিষীই বলতে পারবেন কী হতে চলেছে। ’
আরএসপি সাংসদ এন কে প্রেমচন্দ্রণের মতে, ‘কখন অধিবেশন ডাকবে সে ক্ষমতা সরকারের হাতে। এমনও হতে পারে আগাম সংসদ ডেকে, ভোট অফ থ্যাংকস করিয়ে সরকার এই বছরের শেষে সরাসরি আগাম নির্বাচন ঘোষণা করতে পারে। তবে এও সত্যি এমন ক্ষমতালোভী এই সরকার মেয়াদ ফুরনোর আগেই কার্যকালীন পরিসমাপ্তি ঘটাতে চাইবে বলে মনে হয় না। এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে।’
সংক্ষিপ্ত অধিবেশন প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে জানিয়েছেন, ‘জি-২০ বৈঠক, চন্দ্রযান এর মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য সরকারের ঝুলিতে। গত ৯ বছরে সরকারের প্রাপ্তি, সাফল্য, উপলব্ধি ইত্যাদি তুলে ধরা হতে পারে সংক্ষিপ্ত এই অধিবেশনে।’ বিজেপি সাংসদ সঞ্জয় কুমার জয়েসওয়াল বলেন, ‘অধিবেশনের নামে এত ভয় কেন বিরোধীদের? সংসদে আসুন, সবকিছু পরিস্কার হবে।’
এরই পাশাপাশি, প্রথামাফিক সিসিপিএ (ক্যাবিনেট কমিটি অন পার্লামেন্টারি এফেয়ার্স)-র বৈঠক না ডেকে কেন রাতারাতি সরকার বিশেষ সংসদীয় অধিবেশনের ডাক দিল, এদিন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিরোধী শিবিরের তরফে৷ মুম্বইয়ে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়া রাহুল গান্ধীকে এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘হতে পারে প্যানিকের জেরে এই অধিবেশন ডাকা হয়েছে৷’ কারণ যাই হোক, এই মুহূর্তে সবার নজর আটকে রয়েছে সেপ্টেম্বরে মোদী সরকারের ডাকা পাঁচ দিনের ‘মিনি’ অধিবেশনে।