প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: দোরগোড়ায় লোকসভা ভোট। তার আগে বুধবার বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি (BJP) সরকারকে কার্যত তুলোধোনা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। এদিন কেন্দ্রের সরকারকে ’ঠুঁটো জগন্নাথ’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। ১০০ দিনের কাজের টাকা না দেওয়া নিয়েও প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের সরকারকে এক হাত নেন। একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, রাজ্যে কয়েক হাজার শিক্ষকের চাকরি দেয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছি। কিন্তু সিপিএম ও বিজেপির পান্ডারা তা হতে দিচ্ছে না।
রাজ্যের পূর্ব এবং পশ্চিম বর্ধমানকে নিয়ে এদিন বর্ধমানের গোদার মাঠে প্রশাসনিক সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ১৮২ টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১৩১৫ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নতুন যেসব প্রকল্পের কাজ হবে তার শিলান্যাস করেন। তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) সরকারের ১২ বছরে রাজত্বে হওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এবং বিভিন্ন সরকারি সহায়তা প্রদানের কথা প্রশাসনিক সভা থেকে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের কত সংখ্যক মানুষ এখনও পর্যন্ত এইসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন সেই তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী এক ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যের কত সংখ্যক মানুষ নতুন করে কোন কোন সরকারি প্রকল্পের সহায়তা পেতে চলেছেন সেই তথ্যও মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভা থেকে তুলে ধরেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প ও সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন এমন বিপুল সংখ্যক মানুষ আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ছ’টি বিশেষ প্রকল্পের সুবিধা পেতে চলেছেন। তারমধ্যে রাজ্যের আরও ১৩ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভান্ডার পেতে চলেছেন। এছাড়াও আরো ৯ লক্ষ মানুষ বার্ধক্য ভাতা এবং ১ লক্ষ ৪ হাজার মহিলা বিধবা ভাতা পাবেন। আর মানবিক ভাতা পাবেন আরো ৭ হাজার জন এবং কন্যাশ্রী প্রকল্পে আরও ১০ লক্ষ মহিলা সংযুক্ত হবে। পাশাপাশি রূপশ্রী প্রকল্পেও আরও ৮৫ হাজার জন ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সংযুক্ত হবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন।
প্রকল্পের সহায়তা প্রদানের তথ্য তুলে ধরার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার মানুষের জন্য এত কিছু আমরা করছি। তবুও অনেকে বলে আমরা নাকি কিছুই করছি না।’ এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মত এত সমাজ সংস্কার, এত সামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন সারা পৃথিবীতে কেউ করতে পারেনি। এর জন্য আমরা গর্বিত। কন্যাশ্রীরা (Kanyashree) আমার গর্ব। রাজ্যের দু’কোটি মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা পায়। শিক্ষাশ্রী পায় ১ কোটি ১৭ লক্ষ মানুষ। এছাড়াও রাজ্যের ৮ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পায়। এসব ছাড়াও কৃষক বন্ধু, সবুজ সাথী ও সমব্যথী প্রকল্পের সুবিধাও মানুষ পেয়ে থাকেন।’ মুখ্যমন্ত্রী তরফে রূপশ্রীদের একটি করে বেনারসি শাড়ি এদিন দেওয়া হয়।
প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই রাজ্যে চাকরির আর কোনও প্রবলেম থাকবে না। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আমরা রাজ্যে ডেভলপমেন্ট বোর্ড তৈরি করেছি। পরিযায়ী শ্রমিকদের ডেভলপমেন্ট বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরে আসার এবং ভোটের সময় ভোটটা দিতে আসার জন্যও মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান। রাজ্য সরকারের শস্য বিমার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অসময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতির ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে চাষিদের চিন্তিত না হওয়ার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরা শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ান। তিনি বলেন, ‘আমরা এত কিছু করছি।আর কেন্দ্রীর সরকার ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকছে। রাজনৈতিকভাবে ওরা ঠুঁটো। ওদের বাক্সটা একদিন হয়ে যাবে ফুটো। ওরা বলছে, ওরা নাকি ঘরে ঘরে জল দিচ্ছে। কিন্তু কিন্তু আপনারা জানেন কি, ‘বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছানোর কাজটা আমরাই করি। যে জমি দিয়ে জলের পাইপ যাবে সেই জমিটা আমরাই কিনি। রক্ষণাবেক্ষণটাও আমরাই করি। আর ওরা শুধু মাছের তেলে মাছ ভাজে।’আর এখান (বাংলা) থেকে জিএসটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা সবাইকে ১৫ লক্ষ করে টাকা দেবে বলেছিল। নির্বাচন আসলে ওরা গ্যাসের দাম একটু কমিয়ে দেয়। আর ভোট মিটে গেলেই গ্যাসের দাম আরো বেশি করে বাড়িয়ে দেয়।’