শিলিগুড়ি: মাঝে কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর কয়লার ফের রমরমা কারবার শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় বেআইনি কয়লা নামিয়ে সেগুলির সঙ্গে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। সেখান থেকে সেই ভেজাল মিশ্রিত কয়লা আবার বিভিন্ন চা বাগান এবং রায়গঞ্জ, মালদা ও বিহারে পৌঁছে যাচ্ছে। সোমবার বাগডোগরা, ঘোষপুকুরের বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে কয়লায় ভেজাল মেশানোর ভয়ংকর দৃশ্য ধরা পড়েছে। ক্রেতা সেজে দরদাম করতে গেলে কর্মীরা প্রথমে সেখানে ঢুকতেই বাধা দেন। পরে কয়লার গুণমান দেখার কথা বললে গাড়ি থেকে কয়লার নমুনা এনে হাতে দিয়েছেন। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক বলছেন, ‘রাস্তায় নিয়মিত নজরদারি রয়েছে। বেআইনি কারবার রুখতে পুলিশ সবসময় সক্রিয়।’
শিলিগুড়িকে করিডর করে অসম এবং নাগাল্যান্ড থেকে প্রতি রাতে কয়েকশো কয়লাবোঝাই গাড়ি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা এবং বিহারে যাচ্ছে। সূত্রের খবর, প্রতিদিন প্রায় ২৫০ গাড়ি চোরাই কয়লা এই এলাকা দিয়ে পাচার হচ্ছে। এক-একটি গাড়িতে প্রায় ৫০ টন কয়লা থাকছে। এক গাড়ি কয়লার দাম পড়ছে সাত লক্ষ টাকা। আর অবাধে এক গাড়ি কয়লা পাচার করার জন্য শুধুমাত্র এই রাজ্যেই ৭০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় কারবারিদের। উত্তরবঙ্গ সংবাদে ধারাবাহিকভাবে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর কয়েকদিন কয়লার গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। অসম-বাংলা সীমান্তে প্রচুর কয়লার গাড়ি আটকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহে আবার এই কারবার শুরু হয়েছে।
সোমবার ক্রেতা হিসাবে একাধিক কয়লার ডিপোয় পৌঁছে দেখা গিয়েছে সেখানে অসম, নাগাল্যান্ড থেকে আসা গাড়ি থেকে কয়লা নামানো হচ্ছে। সেই কয়লার সঙ্গে কাঠকয়লা এবং পাথর মেশানো হচ্ছে। ঘোষপুকুর সংলগ্ন এক জায়গায় আবার চা কারখানায় কয়লা পোড়ানোর পরে যে ছাই তৈরি হয়, সেই ছাইও মজুত রাখা অবস্থায় দেখা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, এই ছাইয়ে জল মিশিয়ে তার মধ্যে পাথর দেওয়া হয়। এর পরে পাথরগুলি কয়লার রং ধারণ করলে সেগুলি কয়লার সঙ্গে মেশানো হয়।
বাগডোগরা বিমানবন্দরে যাওয়ার ফ্লাইওভার পেরিয়েই দুটি হোটেলের মাঝে এক জায়গায় দেখা গেল বেশ কিছু কয়লার গাড়ি সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পাশে এক জায়গায় কয়লা ডিপো বানিয়ে সেখানে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যে সমস্ত কয়লার গাড়ি তরাইয়ের বিভিন্ন চা কারখানায় যাবে সেগুলির ওজন বাড়াতে জলও মেশানো হচ্ছে। একইভাবে ঘোষপুকুরেও রাস্তার পাশে টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা বিশাল জায়গায় কয়লার অবৈধ কারবার দেখা গিয়েছে। সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা বেশিরভাগই ঘোষপুকুরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা জানালেন, এই কাজ করে প্রতিদিন মজুরি মেলে ৩৫০ টাকা। দীর্ঘদিন ধরেই এখানে গাড়ি থেকে কয়লা নামিয়ে তার মধ্যে পাথর, কাঠকয়লা সহ অন্যান্য ভেজাল মেশানো হয়। একেকটি গাড়িতে ১০-১৫ কুইন্টাল পর্যন্ত ভেজাল মেশানোর নির্দেশ রয়েছে। তবে, এমনভাবে গাড়ি থেকে কয়লা নামিয়ে তার সঙ্গে ভেজাল মিশিয়ে আবার গাড়িতে ভর্তি করা হয় যা খালি চোখে কেউ ধরতে পারবে না।