প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ সংসদীয় পরিসরে আবারও তীব্র বাদানুবাদে জড়ালেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়। এদিন উভয়পক্ষ একে অন্যের বিরুদ্ধে ছুঁড়ে দিলেন চোখা-চোখা বাক্যবাণ। ডেরেক এবং ধনকড়ের বিবাদ এদিন এমন স্তরে পৌঁছয়, যার জেরে মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথায় উচ্চকক্ষের কাজ সারাদিনের জন্য মুলতুবি করে দেন রাজ্যসভা চেয়ারম্যান। কিন্তু কী এমন ঘটল যার জেরে উত্তপ্ত হল রাজ্যসভা?
শুক্রবার, সপ্তাহান্তে সংসদীয় বাদল অধিবেশনে মণিপুর ইস্যুতে ফের আলোড়িত হয় রাজ্যসভা। মণিপুর ইস্যুতে আলোচনার দাবিতে প্রবল হইচই বাধিয়ে বিরোধী দলীয় সাংসদরা ‘ওয়েলে’ নেমে এসে ধরনা প্রদর্শন করেন। সূত্রের দাবি, সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে রাজ্যসভায় আলোচনার দাবিতে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরের পক্ষ থেকে এদিন ৪৭ জন সাংসদ, সংসদীয় অধিনয়ম ২৬৭ ধারায় মুলতুবি প্রস্তাব চেয়ে নোটিস দেন। প্রত্যাশিত ভাবেই সেই সব আর্জি খারিজ করেন রাজ্যসভা চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়।
এ প্রসঙ্গে ধনকড় বলেন, মণিপুর ইস্যুতে আলোচনা করতে রাজি সরকারপক্ষ। নিয়ম ১৭৬ এর অধীন স্বল্পদৈর্ঘ্যর আলোচনা সম্ভব, কিন্তু বিরোধীদের দাবি মতো সংসদীয় আইনে ২৬৭ ধারায় আলোচনা সম্ভব নয়। রাজ্যসভায় আন্দোলনরত বিরোধী দলীয় প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তাঁর মন্তব্য, উচ্চকক্ষের সদস্যদের কীর্তি গোটা বিশ্ব দেখছে। এর ফলে, বিরূপ বার্তা যাচ্ছে। সকলকে সংযত, রুচিশীল হওয়ার পরামর্শও দেন ধনকড়। তাঁর বক্তব্যের মাঝেই বাধাদান করে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের দাবি, ‘আমরা নিয়ম কানুন জানি। বিরোধীরা মণিপুর নিয়ে আলোচনা চাইছে। সে সাপেক্ষে অনাস্থা প্রস্তাবও আনা হয়েছে। এটাও সবাই জানে, সংসদীয় নিয়মে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হলে, তার নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোন বিষয় বা বিল নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়। এর পরেও সরকার ‘গা জোয়ারি’ একের পর এক বিল পাস করাচ্ছে।
ডেরেকের অগ্নিমূর্তি দেখে ক্ষোভপ্রকাশ করেন ধনকড়৷ তীব্র কটাক্ষ হেনে তিনি বলেন, ‘প্রত্যহ এই ড্রামাবাজি আপনার স্বভাবে দাঁড়িয়ে গেছে। আপনার উচিত চেয়ারের প্রতি ন্যুনতম সম্মান প্রদর্শন করা।’ এমন মন্তব্যে আরও রেগে গিয়ে ডেরেক ও’ব্রায়েন জানান, ‘আমি নাটক করতে আসিনি। সংসদের আইনকানুন যথেষ্ট ভালো জানি। এই ভাবে আপনি কথা বলতে পারেন না।’ এই কথার সূত্রে উত্তেজিত হয়ে ডেস্কে চাপড় মারেন ডেরেক ও’ব্রায়েন৷ এই উদ্ধতস্বভাবে কুপিত হন ধনকড়। তিনি বলেন, ‘ডেস্ক চাপড়ে কথা বলবেন না৷ এটা চরম অমর্যাদাকর। এই ভাবে আপনি অপমান করতে পারেন না। এসব নাটক বন্ধ করুন।’ তাতে অবশ্য কোনও প্রভাব পড়েনি ডেরেকের উপর৷ তিনি নিজ আসনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে যান। এর পরেই ‘আমার ক্রমশ দম বন্ধ হয়ে আসছে’ বলার সঙ্গে সঙ্গেই সারাদিনের জন্য রাজ্যসভার কাজ মুলতুবি করে দেন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়।