রায়গঞ্জ: এক পড়ুয়াকে মানসিক নির্যাতন, হেনস্তা ও অপমান করার অভিযোগ উঠেছে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরই প্রতিবাদে ইংরেজি বিভাগের এক অধ্যাপক ও এক অধ্যাপিকার বিরুদ্ধে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই তদন্ত কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও শিক্ষাকর্মী, প্রতিনিধি এবং ছাত্র প্রতিনিধি না থাকায় বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন শিক্ষাকর্মী ও ছাত্ররা। মঙ্গলবার কমিটির তরফে অভিযোগকারী পড়ুয়া, রিসার্চ স্কলার, শিক্ষাকর্মী, সংশ্লিষ্ট বিভাগের ছাত্রছাত্রী ও অভিযুক্ত অধ্যাপক এবং অধ্যাপিকাকে ডেকেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক সুবীর চক্রবর্তী গত সোমবার উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে তদন্ত কমিটিতে শিক্ষাকর্মী প্রতিনিধি না থাকায় তীব্র প্রতিবাদ জানান। এদিন তদন্ত কমিটি কার্যক্রম শুরু করতে উপাচার্যের চেম্বারের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন শিক্ষাকর্মীরা। যদিও উপাচার্য দীপক কুমার রায়ের দাবি, শিক্ষক ও শিক্ষিকার তদন্ত কমিটিতে শিক্ষাকর্মী ও ছাত্র প্রতিনিধি থাকার প্রয়োজন নেই। তাই তাঁদের রাখা হয়নি।
অন্যদিকে, তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির জেলা সভাপতি তপন নাগের যুক্তি, এই বিষয়টির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্মান জড়িত। তাই এই তদন্ত কমিটিতে শিক্ষাকর্মী ও ছাত্র প্রতিনিধি রাখতেই হবে। যখন শিক্ষাকর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন হয় তখন কেন শিক্ষকদের রাখা হয়? এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হতে দেব না।’
উপাচার্য বলেন, ‘আমরা তো ছাত্রছাত্রীদের মতামত নেব। এক্ষেত্রে তদন্ত কমিটিতে তাঁদের রাখার প্রয়োজন নেই। এদিন শিক্ষাকর্মীরা অগণতান্ত্রিক ভাবে তদন্ত কমিটি অভিযোগ এনে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।’ রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ইউনিয়নের সদস্য প্রীতম সরকার বলেন, ‘এই বিষয়টির সঙ্গে যেহেতু পড়ুয়াদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে তাই আমাদের দাবি ছিল আমাদের তরফে তদন্ত কমিটিতে কমপক্ষে দু’জন প্রতিনিধিকে রাখা হোক। উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে মেইল করে আমরা দাবিপত্র জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সদুত্তর পাইনি। তাই তদন্ত কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দূর্লভ সরকার বলেন, ‘অনগ্রসর কল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের নির্দেশে এই তদন্ত কমিটি হয়েছে। এক ছাত্র অনগ্রসর কল্যাণ বিভাগে অভিযোগ করেন, ওই দপ্তর জেলাশাসকের দপ্তরকে জানায় এবং জেলাশাসকের দপ্তর থেকে আমাদের জানানো হয়। উপাচার্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আজ শুনানি আছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উচ্চশিক্ষা দপ্তর ও জেলা অনগ্রসর কল্যাণ দপ্তরকে পাঠাতে হবে।’
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও অভিযোগকারী ছাত্র এদিন দাবি করেন, ‘আমার প্রধান অভিযোগ নিয়মিত ক্লাস হত না। সেটা নিয়ে আমরা অভিযোগ জানিয়েছিলাম। যেহেতু নিয়মিত ক্লাস হত না তাই আমরা টিউশন ফি কমানোর দাবি জানিয়েছিলাম। আমি প্রতিবাদ করায় একজন শিক্ষক ক্লাসে ঢুকে আমাকে ধমক দিয়ে ক্লাস থেকে বের করে দেন। পরদিন ক্লাসে আসার পর এক অধ্যাপক ও এক অধ্যাপিকা অফিসে নিয়ে গিয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা আমাকে বকা ধমক দেন। আমাকে মানসিকভাবে হেনস্তা করেন।’ তাঁর আরও দাবি, ‘জাতিগত বিষয়ে আমি কারও কাছে কোনও অভিযোগ করিনি। কে অভিযোগ করেছেন, আমি জানি না। আমাদের অভিযোগ নিয়মিত ক্লাস হয় না। প্রতিবাদ করায় আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হত। এদিন তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়ে আমার অভিযোগ জানিয়েছি।’