নাগরাকাটা: ৩১ কেজি ওজনের বাঘা আড় ধরা পড়ল জলঢাকা নদী থেকে। মঙ্গলবার হিলা চা বাগান লাগোয়া জলঢাকা নদী থেকে স্থানীয় কয়েকজন মৎস্যজীবীর জালে ওই মাছ ধরা পড়ে। এত বড় আড় মাছ ধরা পড়ায় হইচই শুরু হয়ে যায় সেখানে। মাছটিকে কাঁধে তুলে নিয়ে আসেন স্থানীয়রা।
মৎস্য দপ্তরের নাগরাকাটার এক্সটেনশন অফিসার নুর মহম্মদ বলেন, ‘এই ধরনের মাছ ক্রমশ কমে আসছে। এটা অত্যন্ত আনন্দের খবর যে জলঢাকা থেকে বাঘা আড়ের অস্তিত্ব প্রমাণ হল।’ অন্যান্য সব নদীয়ালি মাছের সংরক্ষণে প্রত্যেকেই যাতে এগিয়ে আসেন সেই অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘তিস্তা, জলঢাকা, ডায়না, কালজানি, সংকোশ, তোর্ষার মতো উত্তরবঙ্গের বড় নদীগুলিতে এই ধরনের মাছ আগে প্রচুর মিললেও এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূলে রয়েছে নানা কারণে নদীর বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হওয়া। এমনটাই যদি চলতে থাকে তবে ভবিষ্যতে বাঘা আড়ের মতো বৃহৎ মাছ আর পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
নাগরাকাটার হিলা চা বাগানের গা ঘেঁষে জলঢাকা নদী প্রবাহিত হয়েছে। সেখানে অনেকেই জাল দিয়ে বা বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরেন। জলঢাকার মহাশোল, খোকসার মতো মাছ স্বাদের জন্য গোটা উত্তরবঙ্গেই বিখ্যাত। তবে এখন আর ওই সব মাছ খুব একটা বেশি মেলে না। বাঘা আড় তো দূরের কথা। হিলার এক শ্রমিক নেতা দূর্গা মাহালি বলেন, ‘আমার কর্মজীবনে জলঢাকা থেকে এত বড় বাঘা আড় উদ্ধার হওয়ার ঘটনা দেখিনি। এই সব মাছকে বাঁচিয়ে রাখতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।’ হিলা চা বাগানের পাশেই অবস্থিত নয়া সাইলি চা বাগান। সেখানকার বড়বাবু ও ডুয়ার্সের বিশিষ্ট গদ্যকার সুকান্ত নাহা বলেন, ‘মাছ বৈচিত্র্যে জলঢাকা যে এখনও অনন্য তা আরও একবার প্রমাণিত হল। বাঘা আড়টিকে দেখে খুব ভালো লেগেছে।’ রাজ্য সরকারের আওতাধীন বাগান থাকার সময় হিলাতে দু’দশক ধরে ম্যানেজারের দ্বায়িত্ব সামলেছেন বর্তমানে চা মালিকদের সংগঠন আইটিপিএ-র ডুয়ার্স শাখার সম্পাদক রাম অবতার শর্মা। তাঁর বক্তব্য, ‘হিলার ৯ বি নম্বর সেকশনের কাছে ভুটান থেকে নেমে আসা জলঢাকার সঙ্গে জিতি নদী মিলিত হয়েছে। এরপর দুই নদীর মিলিত ধারা জলঢাকা নামে প্রবাহিত। ওই নদী থেকে এত বড় মাছ জালে ধরা পড়ার খবর এর আগে কখনো পাইনি। শুনে ভালো লাগছে।’