ধূপগুড়ি: পশ্চিম শালবাড়ির বিবেকানন্দপল্লির ছাত্র সনাতন সরকার এবারে মাধ্যমিকে ৮৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। ইচ্ছে ছিল শালবাড়ি হাইস্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করার। কিন্তু তার আর বাড়ির কাছের স্কুলে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না। কারণ, বাড়ির কাছের শালবাড়ি হাইস্কুলে পদার্থবিদ্যার শিক্ষক নেই। এই অবস্থায় সে বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বৈরাতিগুড়ি হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে তার যাতায়াত সহ অন্যান্য খরচ অতিরিক্ত হবে ঠিকই, কিন্তু আর উপায় কী!
তবে এই অবস্থা শুধু একটি স্কুলেরই নয়, ধূপগুড়ি ব্লকের একাধিক স্কুলে এই অবস্থাই তৈরি হয়েছে। শিক্ষকের অভাবে একাদশে পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়াশোনার স্বপ্নভঙ্গ হতে চলেছে একাধিক পড়ুয়ার। কারও ইচ্ছে ছিল সংস্কৃত নিয়ে পড়ার, কারও বা দর্শন নিয়ে পড়ার। কিন্তু অপারগ স্কুল। শিক্ষক না থাকায় একেবারে মুখের ওপরই একাধিক বিষয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিল ধূপগুড়ির একাধিক স্কুল। এরমধ্যে যেমন জুড়াপানি স্কুলের নামও রয়েছে, তেমনি রয়েছে ডাউকিমারি ডিএন হাইস্কুলও। এছাড়া আরও তিনটি স্কুলের নাম উঠে এসেছে। তারা অবশ্য শিক্ষকের অভাবে অন্য উপায় ভাবছেন।
স্কুল সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, জুড়াপানি হাইস্কুলে দর্শন বিভাগে শিক্ষক নেই। তাই ওই বিভাগে ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস দেবনাথ জানান, দর্শনের শিক্ষক অপর স্কুলে বদলি হওয়ার পর ওই বিষয়ে আর শিক্ষক আসেনি। তাই বিষয় থাকলেও ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
একইভাবে ডাউকিমারি ডিএন হাইস্কুলে সংস্কৃত ও দর্শন বিভাগের শিক্ষক নেই। তারাও এবার ওই দুই বিষয়ে পড়ুয়াদের ভর্তি নিচ্ছে না এবং আগাম সেটা পড়ুয়াদের জানিয়ে দিয়েছে। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক রামকৃষ্ণ রায় জানান, শিক্ষক না থাকায় দুটি বিষয়ে এবারে ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
অপরদিকে, কালীরহাট হাইস্কুলে একাদশ ও দ্বাদশ স্তরে সংস্কৃত এবং ইতিহাসের শিক্ষক নেই। তবে পড়ুয়াদের নিরাশ না করে নীচু ক্লাসের শিক্ষক দিয়েই পঠনপাঠন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই স্কুল। পূর্ব মল্লিকপাড়া হাইস্কুলের অবস্থাও অনেকটা একই। সেখানে দর্শন বিভাগের শিক্ষকের মৃত্যু হওয়ায় শূন্যপদ তৈরি হয়েছে। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রাক্তনী একজনকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এনে পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।
শালবাড়ি হাইস্কুলেও পদার্থবিদ্যা এবং কম্পিউটার বিভাগে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। কিন্তু শালবাড়ি হাইস্কুলে এখনও বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করছে এবং তারপরই বাকি সিদ্ধান্ত জানাবে।
বর্তমানে পড়ুয়াদের ইচ্ছামতো বিষয় না পাওয়ায় তাদের বাধ্য হয়ে দূরের কোনও স্কুলে, না হলে অপছন্দের বিষয় নিয়েই পড়তে হবে। শালবাড়ি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সুদীপ সিনহার কথায়, পদার্থবিদ্যায় শিক্ষক নেই, তাই পর্যালোচনা শুরু করা হয়েছে। আর বিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে পদার্থবিদ্যা না থাকলে ভবিষ্যতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় পড়ুয়ারা অংশ নিতে পারবে না বলেও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
ব্লক থেকে মহকুমা স্তরে উন্নীত হয়েছে ধূপগুড়ি, হালে মহকুমা শাসক সহ একাধিক আধিকারিক যোগ দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা মহলে নজর নেই অনেকেরই। স্কুলগুলি কাউন্সিলের কাছে শিক্ষক চেয়ে আবেদনও করে রেখেছে। কিন্তু শিক্ষক কোথাও আসেননি, কিংবা বদলি হয়ে চলে গিয়েছেন। এই অবস্থায় পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার ইচ্ছে আদৌ পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে বেশ সংশয়ে রয়েছে পড়ুয়ারা।