জলপাইগুড়ি: স্বপ্নপূরণের এ এক অদ্ভুত গল্প। দারুণ মজারও। ইংরেজ সাহেবরা জলপাইগুড়িতে ইউরোপিয়ান ক্লাব তৈরি করেছিলেন। ঢিলছোড়া দূরত্বেই রেসকোর্সে ইংরেজদের প্রিয় ঘোড়দৌড় হত। সেই রেসকোর্স অনেকটাই বদলেছে। সেখানে এখন জেলা পুলিশের দপ্তর সহ প্যারেড গ্রাউন্ড। কিন্তু হঠাৎই সেই রেসকোর্স এলাকায় ঘোড়া চলার টগবগ টগবগ শব্দ। কী ব্যাপার? চোখ তুলে তাকাতেই সবাই অবাক। মাথায় হ্যাট পরা রাজপথে এক তরুণ। ঘোড়ায় চেপে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কোনও জায়গা থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসা নয়, এ ঘোড়া তাঁরই।
ছোটবেলা থেকেই পশুপ্রেম। সেই প্রেমের তাগিদেই জলপাইগুড়ির রেসকোর্সপাড়ার শুভনীল ঘোষের ছোট থেকেই রাস্তা থেকে কুকুর, বিড়াল, ছাগলছানাদের বাড়ি নিয়ে আসার প্রবণতা। বাবা–মা বকতেন, কিন্তু ছোট ছেলেটির মন যেন কিছুতেই বাধা মানত না। এভাবেই চলছিল। বাবা–মায়ের সঙ্গে তাঁদের আদরের ‘নীল’–এর দার্জিলিং, কেদারনাথ, মাউন্ট আবুতে ঘুরতে গিয়ে ঘোড়ার পিঠে চাপা। খুদের মনে সেই সময় থেকেই নিজের ঘোড়া কেনার জোরদার স্বপ্ন। রেসকোর্সে ইংরেজদের ঘোড়ায় চেপে ঘুরে বেড়ানোর গল্প শুনে তার সেই ঘোড়া–ঘোড়া রোগটার আরও বাড়বাড়ন্ত। সময় গড়িয়ে চলার পাশাপাশি মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শেষে রাজস্থানে ইঞ্জিনিয়ারিং। এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে লন্ডনে পড়াশোনার সুযোগ। সেই পড়া শেষে লন্ডনেরই এক সংস্থায় চাকরি।
কিন্তু তাই বলে ছোটবেলার সেই স্বপ্নটা কিন্তু মোটেও শেষ হয়ে যায়নি। ছুটিতে এবারে বাড়ি এসে মনের মধ্যে সেই স্বপ্নটার ফের চাগাড় দেওয়া। পরিবারের সদস্যদের সেই কথা বললেও কেউ তাতে গা করেননি। শুক্রবার নীল আস্ত এক ঘোড়া নিয়ে বাড়ি ফেরার পরই সবার চোখ রীতিমতো ছানাবড়া। শুধু তাই–ই নয়, এক প্রশিক্ষকেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে প্রিয় ঘোড়ার পিঠে চেপে নীল এখন হরদম শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন। রূপকথার সেই রাজপুত্তুরের মতোই। এলাকাবাসী তাপস গুহ মোহিত, ‘ঘোড়া আর নীলের জুটি দারুণ মানিয়েছে।’
নীলের বাবা নরোত্তম ঘোষও আবেগে ভাসছেন, ‘ছোট থেকেই ঘোড়ার প্রতি ছেলের এক অদ্ভুত টান। সেই টানকে ও যে এভাবে বাস্তবায়িত করবে তা আমরা কোনওদিন ভাবতেই পারিনি।’ নীল অবশ্য বেশ লজ্জিত, বলেন ‘ঘোড়ার প্রতি টানে একে নিয়েও পড়াশোনা করেছি। লন্ডন ফিরে সেখান থেকে স্কটল্যান্ড গিয়ে ওখানকার ঘোড়া চালানোর স্বপ্ন আছে।’ জলপাইগুড়ির বাড়ির ঘোড়ার তাহলে কী হবে? নীলের সেই পরিকল্পনাও সারা, ‘এই বাড়ির নীচে একটা আস্তাবল থাকবে। ও এখানেই থাকবে। দেখাশোনার জন্য একজনকে রেখেও যাব।’ আপাতত একটা কাজ অবশ্য বাকি। প্রিয় ঘোড়ার নাম কী হবে সেটা নিয়েই নীল এখন খুব ব্যস্ত।