শিলিগুড়ি: মুম্বইয়ের দেড় কোটি টাকা সাইবার ক্রাইম (Cyber Crime) প্রতারণা (Fraud Case) কাণ্ডে নয়া মোড়। অনলাইনে সিনেমার টিকিট কেটে সিটি সেন্টারের আইনক্সে সিনেমা দিখতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়ে সাত প্রতারক। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে এই চক্রের প্রধান রায়ান সাহা দাস, কনটেন্ট ক্রিয়েটার রোহিত বৈদ্য। বাকিদের মধ্যে দুজন কনটেন্ট তৈরির কাজে জড়িত। অন্যরা এদের শাগরেদ বলে পুলিশ জানিয়েছে। ধৃতদের জেরা করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে বলে মুম্বই পুলিশের (Mumbai Police) দাবি।
তবে পুলিশের ফাঁদ এড়াতে তাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। হ্যাক করা অ্যাকাউন্টের টাকা তারা কখনোই সরাসরি নিজেদের অ্যাকাউন্টে নিত না। শপিং অ্যাপ (মিন্ট্রা, ফ্লিপকার্ট), জুয়েলারি অ্যাপ (ক্যারেটলেন), খাবার অর্ডারের অ্যাপ (জোম্যাটো, সুইগি)-এ টাকা পাঠাতে বলত। খাবার বা পণ্যসামগ্রী ডেলিভারির ঠিকানার ক্ষেত্রেও তারা বিশেষ ফন্দি এঁটেছিল। সরাসরি নিজেদের বাড়িতে নয়, বাড়ির কিছু দূরের ঠিকানা দিত।
রেভ পার্টিতে সাপের বিষ ব্যবহারের অভিযোগে ইউটিউবার এলভি-র গ্রেপ্তারে গোটা দেশে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। রবিবার রাতে শহরের সিনেমা হল থেকে সাত প্রতারকের গ্রেপ্তারের ঘটনা জেন ওয়াই-এর ‘টক অফ দ্য টাউন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে রায়ান সাহা দাস-ই ছিল মূল চক্রী। বাকিরা তার শাগরেদ। তাদের সাইবার ক্রাইম প্রক্রিয়া সম্পর্কে তদন্তকারী মুম্বই পুলিশের এক কর্তা জানান, চক্রটির প্রধান টার্গেট ছিল বিদেশে থাকা ভারতীয় নাগরিকরা। মুম্বইয়ের যে তরুণীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে দেড় কোটি টাকা হাতানো হয় তিনিও একজন প্রবাসী।
প্রবাসী ভারতীয়দের বিশ্বাস অর্জনে প্রথমে চক্রটি ফোন করে বিদেশি উচ্চারণে কথা বলত। এরপর তারা ফোন প্রাপকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি অসুরক্ষিত বলে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ‘ফ্রড অ্যাকশন টিম’-এর কাছে কল ফরওয়ার্ডের কথা জানাত। কয়েক মুহূর্ত পর চক্রের অন্যজন নিজেকে ওই টিমের সদস্য পরিচয় দিয়ে একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে বলত। ডাউনলোড হওয়ার পর ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি লগ-ইন করার পর কার্ড নম্বর টাইপ করতে বলত। একবার সেটা করে দেওয়ার পরেই ওই চক্রের হাতে চলে যেত অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য।
প্রসঙ্গত, গত ৭ মার্চ সাউথ সাইবার পুলিশ থানায় মুম্বই চার্চ গেট এলাকার এক দম্পতি তাঁদের মেয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে দেড় কোটি টাকা সাইবার প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে তদন্তে নেমে মুম্বই পুলিশ জানতে পারে, চক্রটি কলকাতার। যদিও কলকাতায় মুম্বই পুলিশের টিম পৌঁছাতেই সেখান থেকে চক্রের সবাই পালিয়ে প্রথমে শান্তিনিকেতনে যায়। সেখান থেকে কয়েকদিন পরই শিলিগুড়িতে চলে আসে। শান্তিকেতন থেকেই তারা মোবাইল বন্ধ করে দেয়। যদিও শিলিগুড়িতে সিনেমা দেখার টিকিট অনলাইন বুকিং করতেই, তারা মুম্বই পুলিশের ফাঁদে পড়ে পাকড়াও হয়।