প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: সর্বভারতীয় স্তরে দেশের প্রথমসারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে পড়ুয়াদের আত্মহত্যার হার। সম্প্রতি রাজ্যসভায় বর্ষীয়ান বাম সাংসদ ড. ভি শিবদাসনের লিখিত প্রশ্নের জবাবে ধর্মেন্দ্র প্রধানের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি, এনআইটি এবং আইআইএম-সহ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মোট ৯৮ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এখনও পর্যন্ত আত্মঘাতী হয়েছেন ২০ জন পড়ুয়া। ২০২২ সালে মোট সংখ্যাটা ছিল ২৪। এর আগে ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন ৭ জন পড়ুয়া। ২০২০ সালেও আত্মঘাতী পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ৭। ২০১৯ সালে আত্মত্যা করেছিলেন ১৯ জন পড়ুয় এবং ২০১৮ সালে আত্মঘাতী পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ২১।
শিক্ষা মন্ত্রকের তথ্যানুযায়ী, আত্মঘাতী ৯৮ জন পড়ুয়াদের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক আত্মহত্যা হয়েছে আইআইটি-র ক্যাম্পাসগুলিতে। দেশের বিভিন্ন আইআইটি-তে মোট ৩৯ জন আত্মঘাতী হয়েছেন গত পাঁচ বছরে। তারপরেই তালিকায় আছে এনআইটি। সেখানে আত্মহত্যা করেছেন ২৫ জন পড়ুয়া। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও আত্মঘাতী হয়েছেন ২৫ জন। আইআইএম-এ আত্মহত্যা করেছেন ৪, আইসার-এ ৩, আইআইআইটি-র ২ পড়ুয়া। এছাড়াও বিগত পাঁচ বছরে আইআইটি, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ কেন্দ্রের অধীনস্থ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি পড়ুয়া। সংসদে পেশ করার সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ এবং ২০২৩ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখনও পর্যন্ত সংরক্ষিত বিভাগের ১৭,৫৪৫ পড়ুয়া পড়াশোনা ছেড়ে দেন মাঝপথেই। এদিকে ৮ হাজার ১৩৯ জন তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি পড়ুয়া আইআইটি থেকে পড়াশোনা ছেড়েছেন।
এই প্রসঙ্গে, বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রমশ বেড়ে ওঠা আত্মহত্যার প্রবণতা বিষয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার জানিয়েছেন, কোভিডের সময় এবং পরবর্তীতে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি খেয়াল রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছে এবং উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পড়ুয়াদের শারীরিক সুস্থতা, খেলাধুলা, স্বাস্থ্য, মানসিক সুস্থতার প্রচারের জন্য নির্দেশিকাও জারি করেছে ইউজিসি। তিনি আরও জানান, শিক্ষাগত চাপ কমানোর জন্য মন্ত্রণালয় পিয়ার অ্যাসিস্টেড লার্নিং, শিক্ষার্থীদের জন্য আঞ্চলিক ভাষায় কারিগরি শিক্ষা প্রবর্তনের মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলির সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছে মন্ত্রক।
যদিও কেন্দ্রের এই যুক্তিতে আস্থাশীল নয় বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই। শনিবার ছাত্র সংগঠনের (এসএফআই) সভাপতি ভি পি সানু এবং সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাসের তরফে দাবি করা হয়, পড়ুয়াদের আত্মহত্যার কারণ রূপে মানসিক চাপ, মানসিক নিগ্রহ, একাকিত্ব, পারিবারিক সমস্যার মতো একাধিক দিক তুলে ধরলেও, পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো দিনই গুরুত্ব দেয়নি সরকার। এ নিয়ে যথাযথ কোনও পরিকল্পনা না নিয়ে বরাবর মৌন থাকাই শ্রেয় মনে করেছে সরকারপক্ষ। এসএফআই-র শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, আর্থ সামাজিক অবক্ষয় এবং প্রতিযোগীতামূলক আবহে পুঁজিবাদী ধারায় শোষণ এবং বঞ্চনাও পড়ুয়াদের ক্রমশ আত্মহননের পথে ঠেলে দিয়েছে৷ বিশেষ করে, সমাজের অনগ্রসর ও নিম্নবর্গের প্রতিনিধি দল থেকে উঠে আসা মেধাবী অথচ অভাবক্লিষ্ট পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানো উচিত সরকারের, শিক্ষা খাতে অনুদান বৃদ্ধি, আর্থিক সাহায্যের দিশা দেখালে ভবিষ্যতে বহু অমূল্য প্রাণ বাঁচানো সম্ভব বলে দাবি করেছেন বাম ছাত্রনেতারা।