নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্টে জোর ধাক্কা খেলেন আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটগ্রহণের যখন মাত্র ২৪ ঘন্টা বাকি, ঠিক সে মুহূর্তে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক, এই আর্জি নিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নৌশাদ। শুক্রবার সেই আর্জি পত্রপাঠ খারিজ করে দেন শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতি বি ভি নাগারত্না এবং বিচারপতি প্রশান্ত কুমার মিশ্র৷
প্রসঙ্গত, দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পরে রাজ্যে মোতায়েন করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই মতো কেন্দ্রের কাছে ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দাবি করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনী পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে কেন্দ্র। তার পর চলে কেন্দ্র কমিশন চিঠি চালাচালির পালা। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার আদালতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানায় বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনীও পাঠানো হবে। বাকি কোম্পানির মধ্যে ১৮৫ কোম্পানি ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে। বাকি বাহিনী আজ রাতের মধ্যে রাজ্যে আনানোর জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নজিরবিহীন ভাবে আকাশপথে লেহ থেকে এয়ারলিফট করে আনা হচ্ছে বাহিনী। নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে ও নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়ে ভোট পরবর্তী হিংসা সামলাতে নির্বাচন মেটার দশ দিন পর্যন্ত রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখার পরামর্শ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এই আবহে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়ে নৌশাদ সিদ্দিকি বলেন, রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়, প্রয়োজন আরও বেশি বাহিনীর। তাঁর হয়ে শীর্ষ আদালতে এই আর্জি রাখেন আইনজীবী রউফ রহিম। এর পালটা এদিন রাজ্য সরকারের তরফে সওয়াল করতে গিয়ে প্রবীণ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শীর্ষ আদালতকে জানান, পঞ্চায়েত ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার৷ কল্যাণের যুক্তি, ‘এবারের ভোটে ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করার কথা আছে৷ এত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী একটি রাজ্যে সাধারণ নির্বাচনের সময়েও ব্যবহার করা হয় না৷ এছাড়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি আছে রাজ্য পুলিশও৷ থাকছে সিসিটিভি’র ব্যবস্থাও৷’ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার সূত্র ধরেই বিচারপতি নাগারত্নার মন্তব্য, ‘নির্বাচনের আয়োজন মানেই হিংসা ছাড়পত্র নয়- এই জন্যই আগের শুনানির দিন মন্তব্য করেছিলাম৷ হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট চেয়েছে অবাধ-শান্তিপূর্ণ ভোট হোক৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় কিভাবে মোতায়েন করা হবে তা পরিস্থিতি অনুযায়ী বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন৷ এই ক্ষেত্রে আদালতের কিছুই করার নেই৷’
প্রত্যাশিত ভাবেই শীর্ষ আদালতের শুনানিতে শুক্রবার বিধায়ক নৌশাদের এই আর্জিতে কর্ণপাত করেননি সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি বি ভি নাগারত্না এবং বিচারপতি প্রশান্ত কুমার মিশ্র৷ ভোট শান্তিপূর্ণ, অবাধ রাখার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন, শুক্রবার সাফ জানানো হয়েছে শীর্ষ আদালতের তরফে৷ এই প্রসঙ্গেই নৌশাদ সিদ্দিকির তরফে সওয়াল করা আইনজীবী রউফ রহিমকে উদ্দেশ্য করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগারত্নার মন্তব্য, ‘রাজ্যে স্পর্শকাতর বুথ আছে, সাধারণ বুথও আছে৷ কোথায় কত বাহিনী মোতায়েন করা হবে তা স্থির করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের৷ তারাই গ্রাউন্ড রিয়েলিটি বিচার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে৷ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হল ফ্রি এণ্ড ফেয়ার নির্বাচনের ব্যবস্থা করা৷ আদালত বলতে পারে না কোথায় কত বাহিনী মোতায়েন করা হবে৷’ তিনি কটাক্ষ করে ফেলেন, ‘আপনাদের পিটিশন দেখলে মনে হচ্ছে এটা প্রাইভেট ইন্টারেস্ট লিটিগেশন৷ হাইকোর্ট সবিস্তারে অর্ডার দিয়েছে৷ তারপরেও বারবার মামলা করেছেন কেন?’ এর পরেই নৌশাদের আর্জি খারিজ করে দেন বিচারপতিরা।