রাজু সাহা, শামুকতলা: সুস্মিতার বাবা নেই। দারিদ্র্য নিত্যসঙ্গী। মা প্রাইভেট টিউশন করার পাশাপাশি মনিহারি জিনিস ফেরি করে কোনওরকমে সংসার চালান। তিন বোনের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ জোগাড় করতে পারেন না ঠিকমতো। এমন নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই কিন্তু এবছর মাধ্যমিক দিয়েছে সুস্মিতা দেবনাথ। আপাতত ভালো ফলের অপেক্ষায় রয়েছে সে।
ভালো ফলের প্রত্যাশা অবশ্য মানায় সুস্মিতাকে। মহাকালগুড়ি মিশন গার্লস হাইস্কুলের এই মেধাবী ছাত্রী এর আগেও প্রতিটি ক্লাসে উল্লেখযোগ্য রেজাল্ট করেছে। সুস্মিতার দিদি মল্লিকা তো গত বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে দশম হয়েছিল। স্কুলের শিক্ষিকাদের আশা সুস্মিতাও মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টই করবে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মমতা বসুমাতার কথায়, ‘মল্লিকার মতো সুস্মিতাকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা। আমাদের আশা দিদির মতো বোনও আমাদের স্কুলের নাম উজ্জ্বল করবে।’ সেইসঙ্গে এত বাধার মধ্যে থেকেও ওরা যেভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে, তা যে রীতিমতো বিস্ময়কর, সেটাও মেনে নিয়েছেন তিনি।
বছর পাঁচেক আগে লিভারের অসুখে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছিলেন বাবা স্বপন দেবনাথ। বাবার চিকিৎসা করতেই সর্বস্ব শেষ হয়ে যায় সুস্মিতাদের। তিন মেয়েকে নিয়ে অথই জলে পড়ে যান মা মহিমা দেবনাথ। তবে এই আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেও মনে জেদ এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকলে যে কোনও বাধাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না, সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে সুস্মিতা।‘
এবছর মাধ্যমিক দেওয়া এই ছাত্রীর কথায়, ‘মা অনেক কষ্ট করে আমাদের পড়াচ্ছে। মায়ের কষ্ট দূর করতে পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনও রাস্তা নেই। তাই পড়াশোনায় কোনও খামতি রাখিনি।’ সে আরও বলে, ‘শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং মায়ের আশা পূর্ণ করতে পারব কি না জানি না। তবে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
মা মহিমা মেয়ের কৃতিত্বে গর্বিত। জানালেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমার তিন মেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। তিন মেয়েই আমার গর্ব। ওরাই আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন।’