মেখলিগঞ্জ: উত্তরবঙ্গে প্রথম দণ্ড পুতুল নিয়ে কাজ শুরু করেছিল মুক্তচিন্তা তরাই পুতুল নাট্য সংস্থা। কিন্তু বর্তমানে টাকার অভাবে ধুঁকছে দলটি। এভাবে চললে একদিন মানুষের স্মৃতি থেকে হয়তো মুছেই যাবে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প। বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্ব পুতুল নাটক দিবস। আর এদিন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নিলেন ওই দলের শিল্পীরা।
মেখলিগঞ্জ ব্লকের ভোটবাড়িতে বিশ্ব পুতুল নাটক দিবস পালন করা হয় প্রতিবছর। এবছরও তার ব্যতিক্রম হল না। আর এদিনই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ের কথা বারবার বলা হয়। ওই দলের শিল্পীরা জানালেন, এই শিল্প বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন। পাশাপাশি পুতুলশিল্পীদের সরকারি ভাতার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।
শিল্পীদের কথায়, মানুষের মধ্যে জনস্বাস্থ্য ও সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৮ সালের এপ্রিলে এই পুতুল নাটকের দলটির জন্ম হয়েছিল সীমান্তবর্তী এই গ্রামে। এটি উত্তরবঙ্গের একমাত্র দণ্ড পুতুল নাটকের দল। এই দল তৈরিতে তৎকালীন মেখলিগঞ্জের বিডিও শুভাশিস ঘোষের বিশেষ ভূমিকা ছিল। সেই সময় তাঁর উদ্যোগেই পুতুল নাটক বিশেষজ্ঞ শুভ জোয়ারদারকে কলকাতা থেকে নিয়ে এসে চ্যাংরাবান্ধায় টানা একমাস প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
ভারতের সংগীত নাট্য অ্যাকাডেমি সূত্রে জানা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক পুতুল নাটক সংগঠনের নাম ‘ইউনিমা’, যার কেন্দ্রীয় দপ্তর সুইৎজারল্যান্ডে। ফ্রান্সের প্রাগ শহরে ২০০০ সালে প্রথম ‘আন্তর্জাতিক পুতুল নাটক দিবস’ পালিত হয়। সেই থেকেই প্রতিবছর এইদিনটিতে আন্তর্জাতিক পুতুল নাটক দিবস পালন করা হয়ে আসছে।
মুক্তচিন্তা তরাই পুতুল নাট্য সংস্থার হাত ধরে ২০০৯ সালের ২১ মার্চ কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা ভোটবাড়ি গ্রামে উত্তরবঙ্গে প্রথম বিশ্ব পুতুল নাটক দিবস পালিত হয়। গোলাম মোস্তফা হোসেন, কৃষ্ণ কর্মকার, বাবুনাথ রায়, আইজার মহম্মদ, ভবেন রায়, দীনেশ রায়দের মতো পুতুলশিল্পীদের কথায়, এটি একটি লোকশিল্প। ডিজিটাল জমানায় এই শিল্প আজ হারিয়ে যাবার উপক্রম। এই শিল্পীরা পুতুলের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন আজও।
সংস্থার সভাপতি শচিমোহন বর্মন বলেন, ‘বর্তমানে নানা কারণে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তবে একে বাঁচাতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছি না।’ শিল্পী কৃষ্ণ কর্মকার জানান, মানুষের সহযোগিতা পেলে নতুন আঙ্গিকে আবার মঞ্চ মাতাবে পুতুল।