- মাখনলাল সরকার
যেদিন বাড়িতে ইটপুজো করেছিলাম, রাম মন্দিরের স্বপ্ন সেদিনই মনের মধ্যে জন্ম নিয়েছিল। স্বপ্ন সফলের প্রত্যাশা নিয়ে তাকে বছরের পর বছর, প্রায় ৩৪ বছর ধরে সযত্নে লালন করে গিয়েছি। আদালত যেদিন রাম মন্দিরের (Ayodhya Ram Mandir) পক্ষে রায় দেয়, সেদিন থেকেই নতুন দিন গোনা শুরু হয়। তবে এত তাড়াতাড়ি যে অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি হবে তা ভাবতেই পারিনি। মন্দির উদ্বোধনের আর কয়েকটি মুহূর্ত, ভাবলেই রীতিমতো গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আদবানিজির (লালকৃষ্ণ আদবানি) রথযাত্রার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।
তারিখটা মনে না থাকলেও পরিষ্কার মনে আছে সেটা ১৯৯০ সাল। বাংলাজুড়ে পুজোর আমেজ। কিন্তু দলীয় নির্দেশে অসম-বাংলা সীমান্তে চলে যেতে হয়। সেখানে রথ তৈরি ছিল। দলের তরফে ওই রথে চেপে বিহারে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই পুলিশের অনুমতি মিলছিল না। দলের নির্দেশ ও পুলিশের অনুমতি না পাওয়ার বিষয়টি প্রতিবেশী গৌরদাকে (তৎকালীন শিলিগুড়ির বিধায়ক সিপিএমের গৌর চক্রবর্তী) জানাই। তিনি মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কলকাতায় পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে অনুমতি পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গৌরদাই করেন। এএসপি পদমর্যাদার একজন পুলিশ অফিসারকেও আমাদের সঙ্গে দেওয়া হয়। বারবিশা থেকে রথ নিয়ে রওনা দিই। কত জায়গায় যে আমাদের দাঁড়াতে হয়েছিল তা আজ বলে বোঝানোর নয়। বিধাননগরে পৌঁছে যখন বিহারে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখনই খবর পাই বিহারে আদবানিজিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় পুলিশ আমাদের আর যেতে দেয়নি। আদবানিজির সঙ্গে দেখা আর করতে পারিনি।
কিন্তু ওই ঘটনার পর দেশজুড়ে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তাতে আমাদের মধ্যে রাম মন্দির তৈরি নিয়ে উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। ইটপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়। দলের তরফে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, বাড়িতে ইটপুজো করে তা আরএসএসের দপ্তরে পাঠাতে হবে। কিন্তু সেই সময়ও পুলিশ বাধা দেয়। ফের গৌরদার কাছে যাই। বেশি লোকের জমায়েত করা যাবে না এবং পুলিশ পাহারায় পুজো করার শর্তে তিনিই অনুমতির ব্যবস্থা করেন। বলতে অসুবিধা নেই, ওই রাজনৈতিক সৌহার্দ্য আজকাল আর নেই। যাইহোক, বাড়িতে ইটপুজো করি। জেলা সভাপতি হিসেবে শিলিগুড়ি মহকুমায় ৫১টি জায়গায় ইটপুজোর আয়োজন করেছিলাম। আরএসএসের মাধ্যমে সমস্ত ইট অযোধ্যায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নবনির্মিত রাম মন্দিরে নিশ্চয় সেই ইট গাঁথা হয়েছে। রাম মন্দির দর্শনের জন্য, স্বপ্নের মাটিতে পা দেওয়ার জন্য এখন মুখিয়ে রয়েছি।
(লেখক বিজেপির দার্জিলিংয়ের প্রাক্তন জেলা সভাপতি)