নাগরাকাটা: ফের ভেস্তে গেল চা বোনাস বৈঠক। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। ১৪ সেপ্টেম্বরের প্রথম বোনাস বৈঠকের ৮.৩৩ শতাংশ হারের প্রস্তাব নামমাত্র বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার মালিকপক্ষ ৮.৫০ শতাংশ হারের কথা বলে। যা শুনে একযোগে প্রত্যাখান করে সবকটি শ্রমিক সংগঠন তাঁদের ২০ শতাংশের দাবিতেই অনড় থাকে। এদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল সোওয়া ৫টা পর্যন্ত কলকাতার বেঙ্গল অফ কমার্সের সভাকক্ষে ম্যারাথন বৈঠক চললেও নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে থেকে সরে আসেননি মালিকরা। ঠিক হয়েছে আগামী ৫ ও ৬ অক্টোবর কলকাতায় তৃতীয় বোনাস বৈঠক হবে। এখন সেদিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও বিকল্প থাকল না ডুয়ার্স-তরাইয়ের স্থায়ী অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৮ লক্ষ শ্রমিকের। এদিনের নিষ্ফলা বোনাস বৈঠকের খবর আসতেই হতাশা চা শ্রমিক মহল্লাগুলিতে।
মালিকদের যৌথ সংগঠন কনসালটেটিভ কমিটি অফ প্ল্যান্টেসন অ্যাসোসিয়েশনস (সিসিপিএ)-এর সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিৎ রাহার মন্তব্য, চা শিল্পের পরম্পরা মেনেই বোনাস চুক্তি সম্পাদিত হবে। বাগানগুলির আর্থিক পরিস্থিতির কথা শ্রমিক প্রতিনিধিদের বুঝিয়ে বলা হয়েছে। এদিকে ২০ শতাংশ হারের বোনাসের দাবিতে শুক্র ও শনিবার গেট মিটিংয়ের ডাক দিয়েছে তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়ন।
শ্রমিকদের যৌথ সংগঠন জয়েন্ট ফোরামের অন্যতম শীর্ষ নেতা জিয়াউল আলম বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। বোনাস রফায় দেরি হওয়ার কারণ মালিকদের মনোভাব। ২০ শতাংশ হারের বোনাস হাতে নিছক শুধু কিছু বাড়তি টাকা নয়। এটা ঘাম রক্ত ঝরিয়ে শ্রম দেওয়া শ্রমিকের মর্যাদার বিষয়।’ ফোরামের আরেক নেতা মণিকুমার দার্ণালের বক্তব্য, চা শিল্পে এমন কিছু হয়নি যাকে বিপর্যয় বলা যেতে পারে। বেশিরভাগ বাগানই ভালোভাবে চলছে। গুটিকয়েক বাগানের রুগ্নতার কারণে সার্বিক বোনাসের হার ২০ শতাংশের কম মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বিজেপি প্রভাবিত ভারতীয় টি ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সভাপতি যুগল কিশোর ঝা’র বক্তব্য, ২০ শতাংশ হারের কম বোনাস মেনে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। একই বক্তব্য তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল সোনারের। তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সভাপতি মনোজ কার্কিডুলি বলেন, ‘মালিকদের সাড়ে ৮ শতাংশ হারের বোনাস প্রস্তাব শুধু হাস্যকরই নয়, অমর্যাদাকরও।’ নর্থবেঙ্গল টি প্ল্যান্টেশন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অভিজিত রায় জানান, আশা করা হচ্ছে পরের বৈঠকে মালিকপক্ষ পরিস্থিতি বুঝে গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্র তৈরির রাস্তায় হাঁটবে। তবে সেক্ষেত্রেও হাতে সময় কম থাকবে। বাগান কর্মচারীদের যৌথ মঞ্চ স্টাফ-সাব স্টাফ জয়েন্ট কমিটির আহ্বায়ক আশিস বসু বলেন, ‘আমরাতো কোনওকালেই অনমনীয় মনোভাব পোষণ করিনি। ২০ শতাংশের বোনাস নিয়ে এখনও আশাবাদী। রফা হয়ে গেলে প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি বিচার করে কিছু বাগানকে ছাড় আগেও দেওয়া হয়েছে। সেটা এবারও থাকবে।’ এদিন বোনাস ফয়সালা না হওয়ায় মালিকপক্ষকে দুষে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংগঠনের মুখ্য উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলা।