প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল, বিগত তিন বছরে নানা দুর্নীতির মামলায় মোট ৯ বার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করেছে ইডি এবং সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। বৃহস্পতিবার দিল্লির সংসদ ভবনে বসে এমনই দাবি করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কয়েকদিন আগেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র মুখোমুখি হন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। প্রায় ৯ ঘণ্টা তাঁকে জেরা করা হয়। এরপর অভিষেকের সমস্ত সম্পত্তির হিসাব তলব করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত তথ্য দিতে বলা হয়েছে। আর তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এর মধ্যেই এবিষয়ে সংসদীয় অলিন্দে মুখ খুললেন অভিষেক।
তৃণমূল নেতা বলেন, ‘ইতিমধ্যে ইডিকে আমার সম্পত্তির সমস্ত হিসাব দিয়েছি। শুধু ইডি নয়, সিবিআই আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে একাধিকবার তলব করেছে।’ এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত হিসাবও দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর দাবি, ‘গত কয়েক বছরে আমি অন্তত ৫ বার হাজিরা দিয়েছি তদন্তকারী সংস্থার সামনে। এমনকি আমার স্ত্রীও ৪ বার হাজিরা দিয়েছে। প্রথম যখন হাজিরা দিই, সেইসময়ই আমার যাবতীয় সম্পত্তি এবং ব্যাংকের লেনদেনের সমস্ত তথ্য তদন্তকারী সংস্থার কাছে জমা দিয়েছি।’ এমনকি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সমস্ত হিসাবও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূল নেতার বক্তব্য, ‘এতদিন ধরে জেরা করা হচ্ছে, আর কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে আমার সম্পত্তির হিসাব থাকবে না? এটা হাস্যকর।’ একই প্রশ্ন করা হচ্ছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। এমনকি গত দু’বছর আগেও যে প্রশ্ন করা হয়, এখনও তাই করা হচ্ছে বলে জানান অভিষেক। তাঁর অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থায় তল্লাশির সময় ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করেছিল ইডি। যাতে সেই তথ্য পরে কাজে লাগানো যায়।
কেন্দ্রীয় এজেন্সির ‘হেনস্তা’ প্রসঙ্গে অভিষেকের দাবি, ‘২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে মোট ৯ বার ডেকেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা৷ আমাকে ৫ বার, আমার স্ত্রীকে ৪ বার৷ তবে আমার সঙ্গে ওঁরা ভালো ব্যবহার করেছেন, ওঁনারা নিজের কাজ করেছেন৷ যা করা হচ্ছে সবই উপরওয়ালার নির্দেশে৷ ওঁদের উদ্দেশ্য একটাই, কখনও গোরু পাচার, কয়লা পাচার বা সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আমার নাম জুড়ে দেওয়া, আমাকে গ্রেপ্তার করা। ক্ষমতা থাকলে করুক।’ অভিষেক এও বলেন, ‘এসবের আসল উদ্দেশ্য অন্য। আমাকে রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে সরিয়ে রাখা৷ আমি সেটা হতে দেব না৷ আমি আমার কাজ করে যাব৷ আমার আইনজীবীরা আইনি দিকটা দেখছেন৷ এসব করে আমায় আটকানো যায়নি, যাবেও না।’ তিনি এও জানান, আবারও তলব করা হবে তাঁকে৷ ইডি, সেবি, সিবিআই-এসবই বিজেপির পুরোনো অস্ত্র৷ কিন্তু তাতে লাভ হবে না। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে বার্তালাপের মধ্যেই ওঠে গোরু পাচারকাণ্ডে তিহাড়ে জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডলের প্রসঙ্গ। সাংবাদিকের মোবাইলে তোলা আদালত চত্বরে অনুব্রত’র হুইল চেয়ারে বসা ভিডিও দেখে অভিষেকের আক্ষেপ, ‘শরীরটা একদম ভেঙে গিয়েছে ওঁনার।’