নয়াদিল্লি: হাতে সময় নেই একেবারেই। বছর শেষে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন, নতুন বছরে লোকসভা ভোটের দামামা। তার মধ্যে আচমকা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিশেষ সংসদীয় অধিবেশনের ডাক। সব মিলিয়ে হাতে সময় অকুলান বিরোধী শিবিরের। এখনও বাকি বহু কাজ। এর মধ্যেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জরুরি সমস্ত সাংগঠনিক কাজ সেরে ফেলার প্রস্তাবে একবাক্যে সহমত প্রকাশ করল বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার বিরোধী শিবিরের মুম্বই সামিটের প্রথম দিনে প্রস্তুতিপর্ব বৈঠকে আগামী ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীর দিনকে পাখির চোখ করে সমস্ত বকেয়া কাজ অতি দ্রুত সেরে ফেলার জন্য মতপ্রকাশ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ সিপিআই(এমএল)র সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের মত নেতারা। সূত্র অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজ্যে রাজ্যে লোকসভার আসন ভাগাভাগি নিয়ে যাবতীয় জট কাটিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে টিম ‘ইন্ডিয়া’।
এদিন বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইন্ডিয়া জোট। ইন্ডিয়া শিবির সূত্রের খবর, শুক্রবার বৈঠকের মূল পর্বে ৫-৬ টি কমিটি গঠন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে সমন্বয় কমিটি, পরিকল্পনা কমিটি, রিসার্চ কমিটি। এছাড়াও জনসভা এবং মুখপাত্র নির্বাচন করার কাজটি চূড়ান্ত করা হবে শুক্রবারের বৈঠকে। সূত্রের খবর, এদিনের ঘরোয়া আলাপচারিতায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব দিয়েছেন, প্রত্যেক দলের নেতাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে কোনও মন্তব্য করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। তাঁর এই প্রস্তাবে সহমত হয়েছেন ইন্ডিয়া জোটের সব নেতারাই। ইন্ডিয়া জোটের সূত্রে জানা গেছে, আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ মতো যে রাজ্যে যে আঞ্চলিক দলগুলি প্রভাবশালী সেখানে তারাই নেতৃত্ব দেবে। তবে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে জাতীয় কংগ্রেসের একটা আলাদা গুরুত্ব থাকবে।
বিরোধী শিবির সূত্রে এও জানা গেছে, নতুন দুটি নতুন দল যোগ দিয়েছে ইন্ডিয়া শিবিরে। ফলে জোটের মোট দল বেড়ে হয়েছে ২৮টি। নতুন দুই দল হল জয় হিন্দ জাতীয় পার্টি এবং ভারতীয় কৃষক ও ওয়ার্কার্স পার্টি। মুম্বইয়ে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের তৃতীয় সামিটের মধ্যেই এসেছে আরও বড় খবর। সূত্রের দাবি, প্রায় ৯ টি আঞ্চলিক দল যোগ দিতে চলেছে ইন্ডিয়া শিবিরে। বিরোধী সূত্রের খবর, যে ৯ টি আঞ্চলিক দল ইন্ডিয়া শিবিরে যুক্ত হতে চলেছে, তার মধ্যে রয়েছে অসমের ৩টি দল। বিরোধী শিবিরের প্রভাবশালী এক নেতা জানিয়েছেন, এই ৯টি আঞ্চলিক দল ইন্ডিয়া শিবিরের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলছে। খুব শীঘ্রই সদলবলে আনুষ্ঠানিক ভাবে তারা ইন্ডিয়া শিবিরে যোগদান করবে বলে জানা গিয়েছে। অসমের তিনটি দলের মধ্যে রয়েছে অসম জাতীয় পরিষদ, রাইজোর দল এবং আঞ্চলিক গণ মোর্চা। রাইজোর দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি অখিল গগৈ অসমে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একটি পরিচিত মুখ। ২০২০ সালের ২ অক্টোবর রাইজোর দলের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ফলে, অখিল গগৈয়ের দল ইন্ডিয়া জোটে সামিল হওয়া একটি বড় ব্যাপার বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অজিত ভুইঁয়ার দল আঞ্চলিক গণ মোর্চাও আসতে চলেছে ইন্ডিয়া শিবিরে। ২০২০ সালের জুন মাসে দলটির প্রতিষ্ঠা হয়। ২০২১ সালে অসমে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে সামিল ছিল আঞ্চলিক গণমঞ্চ। এদিকে, সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, লোগো বদল করা হতে পারে ইন্ডিয়া জোটের। সূত্রের খবর, লোগোতে লেখা ‘বোলে ইন্ডিয়া, দিল মাঙ্গে ইন্ডিয়া’ বাক্যদুটি পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন ইন্ডিয়া শিবিরের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা। যদিও শুক্রবার মূল বৈঠকের পরেই পুরো বিষয়গুলি স্পষ্ট হবে। বৈঠকের শেষদিন ১ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শুক্রবার মুম্বইয়ের হোটেল গ্র্যান্ড হায়াত থেকে দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত রোড শো করবেন রাহুল গান্ধী। কর্মসূচীতে যোগ দেবেন সোনিয়া গান্ধীও।