নাগরাকাটা: ঝলমলে জীবনের লোভ অথবা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার তাগিদ। উদ্দেশ্য যাই থাক না কেন, ডুয়ার্সের চা বলয় থেকে এজেন্টের হাত ধরে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়ে নিখোঁজদের অনেকেই আসলে প্লেসমেন্ট এজেন্সিগুলির কাছে বিক্রি হয়ে যান। যেগুলির আবার কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই। মানব পাচার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছ থেকে এমন কথাই উঠে আসছে।
মোটের ওপর ডুয়ার্সের প্রায় সব বাগান থেকেই নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা রয়েছে। কেউ পুলিশের দ্বারস্থ হন, কেউ আবার পরিজনের জন্য শুধু গুমরে কাঁদেন। যেমন নাগরাকাটার গাঠিয়া চা বাগানের ফুটবল লাইনের শুক্রা মুন্ডা নামে এক ব্যক্তির দিল্লি যাওয়ার পর থেকে কোনও খোঁজ নেই ১০ বছর ধরে। তাঁর স্ত্রী মিনি মুন্ডা বলছেন, ‘কোথায় যে তিনি হারিয়ে গেলেন, কে জানে!’
ওই বাগানের একই শ্রমিক মহল্লা থেকে এক মহিলা ও এক পুরুষ নিখোঁজ যথাক্রমে ৫ ও ১০ বছর ধরে। পাশের বানারহাট ব্লকের দেবপাড়া চা বাগানের নাইক লাইনের বিনোদ ওরাওঁ চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারি গিয়েছিলেন আলিগড়ে ভবন তৈরির শ্রমিকের কাজে। একদিন কাজ করে হাড়ভাঙা খাটুনি সহ্য না হওয়ায় ফেরত আসার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর ছেলে সুজিত বলছেন, ‘সঙ্গে আরও ৩ জন ছিলেন। ওঁরা ফিরে এসেছেন। শুধু বাবা আসেনি। খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’ ওদলাবাড়ি চা বাগানের বাবুজোত এলাকার একসঙ্গে ৩ মহিলারও বহুদিন ধরে খোঁজ পাচ্ছে না পরিবার। এমন দৃষ্টান্ত আরও রয়েছে।
রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘চা বাগান থেকে নিেখঁাজের এমন খবর পেয়ে সেই মহিলাদের বাড়িও আমরা গিয়েছি। সমস্যা হল, পরিজনরা কিছু বলতেই চান না। তাছাড়া স্বেচ্ছায় কেউ অন্য স্থানে কাজে গেলে তাঁকে আটকানোও সম্ভব নয়। তবুও এধরনের অভিযোগ পেলেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’
দীর্ঘদিন নিখোঁজদের সন্ধান মেলে না কেন? ডুয়ার্স মেইল এক্সপ্রেস নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার রাজু নেপালি মনে করেন, ‘অনেকেই পুলিশ প্রশাসনের কাছে কোনও তথ্য না জানিয়ে চলে যান। এরপর গিয়ে চালচুলোহীন প্লেসমেন্ট এজেন্সির হাতে পড়েন। একাধিক এজেন্টের মাধ্যমে কয়েক দফায় হাত বদল হওয়ার পর মূলত দিল্লির সেইসব প্লেসমেন্ট এজেন্সি উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গৃহস্থ বা খামার বাড়িতে কাজ দেয়। এজন্য সেই বাড়ির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গুনে নেয়। এককথায় বিক্রিই করে দেওয়া তাঁদের।’
ডুয়ার্স জাগরণ নামে আরেকটি সংস্থার কর্ণধার ভিক্টর বসু বলছেন, ‘এমন অবাঞ্ছিত ঘটনা আটকাতে সুরক্ষা বলয় তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। মাইগ্রেশন রেজিস্টার এক্ষেত্রে কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে।’ দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড ফোরামের সভাপতি অমিত সরকার বলছেন, ‘একটি ক্ষেত্রে এমন নজিরও সামনে এসেছে যে, রীতিমতো স্লিপ দিয়ে কেনাবেচা হয়েছে।’