কিশনগঞ্জঃ এক গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরে। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, স্বামীর পরকীয়া জেনে যাওয়াতেই খুন হতে হল বধূকে। এই ঘটনায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে মৃতার স্বামীকে। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি কিশনগঞ্জের নেপাল সীমান্তের দিঘলব্যাংক এলাকার ডুবরী গ্রামের বাসিন্দা পূজা ঝাঁয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় ইসলামপুরের বাসিন্দা রঞ্জন ঝাঁয়ের। বিয়েতে লক্ষাধিক টাকা পন, প্রচুর সোনাগয়না, আসবাবপত্র সহ বহু মূল্যবান সামগ্রী দেওয়া হয় বরপক্ষকে। গত শনিবার পূজা ঝাঁয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ইসলামপুরের শ্বশুরবাড়ি থেকে।
মৃতার পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, বিয়ের পরপরই তাঁর স্বামীর পরকীয়া জেনে যায় পূজা। সে একদিন স্বামী রঞ্জনের সঙ্গে তাঁর জা’কে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় হাতেনাতে ধরে ফেলে। এরপর থেকেই শুরু হয় পূজার ওপর শারিরীক ও মানসিক অত্যাচার। কারণে অকারণে তাকে মারধর করতেন স্বামী রঞ্জন, পূজার জা অনুপমা ঝাঁ সহ পরিবারের অন্যরা। এর পাশাপাশি শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বাপের বাড়ি থেকে আরও পন আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে পূজাকে। অত্যাচার চরমে উঠলে পূজা শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসে বাপের বাড়ি দিঘলব্যাংকের ডুব গ্রামে।
এরপরই পূজাকে ফের বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে গত ১৫ জুন ডুবরী গ্রামে আসেন তাঁর স্বামী রঞ্জন ও তাঁর পরিবারের লোকেরা। পূজাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে গ্রামে সালিশি সভায় মুচলেকা দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যান তারা। আর ১৭ জুন রাতেই ঝুলন্ত অবস্থায় শ্বশুড়বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় পূজার দেহ। পূজার শ্বশুড়বাড়ির লোকেদের দাবি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে পূজা ঝাঁ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ইসলামপুর থানার পুলিশ। পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে ইসলামপুর হাসপাতালে।
এদিকে মৃতার পরিবারের দাবি, পূজাকে হত্যা করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই হত্যার দায়ে মৃতার পরিবারের লোকেরা ইসলামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে স্বামী রঞ্জন ঝাঁ, ভাসুর নিকেশ ঝাঁ, জা অনুপমা ঝাঁ ও শ্বশুর সদানন্দ ঝাঁ-এর বিরুদ্ধে ইসলামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়ের করার পরই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে তৎপর হয় পুলিশ। পুলিশের হাতে স্বামী রঞ্জন গ্রেপ্তার হলেও বাকি অভিযুক্তরা পলাতক। পুলিশসূত্রে জানা গিয়েছে মৃতার শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে এই ঘটনায় শোকাহত পূজার বাপের বাড়ি দিঘলব্যাংকের ডুবরী গ্রাম। প্রতিবাদে সপ্রব হয়েছে গোটা গ্রাম। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মোমবাতি মিছিল করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।