উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ মণিপুর ধর্ষণকাণ্ডে বিজেপি শাসিত কেন্দ্রকে চাপে ফেলতে শনিবার মণিপুরের উদ্দেশে দিল্লি থেকে রওনা দিল বিরোধী দলগুলির ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স বা ইন্ডিয়ার একটি ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে বিগত বেশ কয়েকমাস ধরেই আগুন জ্বলছে জাতিগত হিংসায়। এর মাঝেই মণিপুরের রাস্তায় দুই যুবতীকে ধর্ষণের পর নগ্ন করে ঘোরানোর মতন বর্বরোচিত ঘটনা সামনে আসায় আরও অস্বস্থিতে পড়েছে বিজেপি। এই বিষয়ে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘এই ইস্যুতে রাজনীতি করবেন না। এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে যাওয়ার চেষ্টাও করেননি। সরকার কি এতদিন কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে ছিল? আজ বিরোধীদের ধাক্কা খেয়ে জেগে উঠেছে কেন্দ্র।’
এদিকে বিরোধীদের এই মণিপুর যাত্রাকে ‘শো অফ’ বলে কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটের সাংসদদের মণিপুরে যাওয়ার বিষয়টা শুধুমাত্র একটা শো-অফ। তাদের শাসনামলে যখন মণিপুর জ্বলে উঠেছিল তখন বিরোধী ও তার সহযোগীরা কখনও তা নিয়ে কথা বলেনি… তারা মণিপুর থেকে ফিরে এলে আমি কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে অনুরোধ করব যাতে সেই প্রতিনিধিদল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও পা রাখেন তিনি। আমি অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করতে চাই, তিনি কি এই রাজ্যে নারীদের প্রতি অত্যাচারের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন? রাজস্থানে যেখানে নারীদের বিরুদ্ধে হত্যা ও অপরাধ হচ্ছে, সেখানে বিরোধীরা সেখানে যায়নি। ইন্ডিয়া জোট কি রাজস্থানেও যাবে?’
উল্লেখ্য, গত ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসায় জ্বলছে বিজেপি শাসিত মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখনও উত্তপ্ত চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। রেহাই পাচ্ছে না মহিলা ও শিশুরাও। এরই মধ্যে সম্প্রতি মণিপুরে মহিলাদের নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানো এবং গণধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছিল। সেই ঘটনার বিভীষিকাময় এক ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। গোটা দেশ তাতে স্তম্ভিত হয়েছিল এই ঘটনায়। এই ঘটনায় ওভিযুক্ত ৭ জনকেই গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়েছে মণিপুর পুলিশ।
জানা গিয়েছে, এই বর্বরোচিত ঘটনাটি ঘটে ইম্ফল থেকে প্রায় ৩৫ কিমি দূরে কাংপোকপি জেলায়। এফআইআরে বলা হয়েছে, জাতিগত হিংসার জেরে গত ৪ মে এক কুকি পরিবারের ৫ সদস্য আতঙ্কে বনে লুকিয়ে পড়েছিলেন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু পুলিশের হাত থেকে তাদের ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। এরপর ঐ পরিবারের ৫৬ বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে খুন করা হয়। তারপর সেই পরিবারের দুই মহিলাকে ধর্ষণের পর নগ্ন করিয়ে হাঁটানো হয়। সম্প্রতি এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এই ঘটনাকে ‘দেশের লজ্জা’ বলে আখ্যা দেন। তবে মোদির এই মন্তব্যে সন্তুষ্ট নন বিরোধীরা। তারা সংসদে এই নিয়ে মোদির বিবৃতি দাবি করেছেন। আর এরই মাঝে এবার হিংসা কবলিত মণিপুরে পা রাখতে চলেছেন বিরোধী সাংসদরা। এর আগে মণিপুরে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল তৃণমূল একা। এবার সম্মিলিত ভাবে ১৬টি দল প্রতিনিধি পাঠাল উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে।