উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ যাদবপুরকাণ্ডে শুক্রবার গ্রেপ্তার হয়েছে দুই প্রাক্তনী ও এক পড়ুয়া। এদের মধ্যে একজন প্রাক্তনী নাসিম আখতার। যাদবপুরে রসায়ন বিভাগের ছাত্র ছিলেন নাসিম। ঘটনার পরপরই হস্টেলে ছেড়ে চলে যায় সে। সে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করেছেন ছাত্রের পরিবার। পরিবারের অভিযোগ, নাসিমকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। এই মেধাবী ছাত্রের গ্রেপ্তারে স্তম্ভিত মেমারির বারারি গ্রাম।
গত ৯ অগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়া। অভিযোগ ওঠে হস্টেলে সিনিয়রদের চুড়ান্ত র্যাগিং-এর কারণেই মৃত্যু হয়েছে ছাত্রের। সেই ঘটনায় এখনও তোলপাড় গোটা বাংলা। এই ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে লালবাজার থানার পুলিশ এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে ১২ জন ছাত্রকে। যার মধ্যে অনেকেই প্রাক্তনী। গতকাল বিকেলের পর গ্রেপ্তার হন দুই প্রাক্তনী আর এক পড়ুয়া। এদের মধ্যে একজন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বারারি গ্রামের বাসিন্দা নাসিম আখতার। নাসিম রসায়ন বিভাগের যাদবপুরের প্রাক্তনী। ঘটনার দিন সে হস্টেলেই ছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। যদিও পরিবারের দাবি, ঘটনার পরের দিন, অর্থাৎ ১০ অগস্ট দাদুর মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। নাসিমের মামা ইজাজুল হক সাহানা বলেন, ‘‘নাসিম সাদাসিধে ছেলে। ও খুব ভাল ছেলে। পড়াশোনায় ভাল। কোন ভাবেই জড়িত নয়। মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। ও নির্দোষ। ওকে যেন শাস্তি না দেওয়া হয়।’’
নাসিমের গ্রেপ্তারে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে পরিবারের লোকেরা। নাসিমের বোন শায়েরি আখতার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘হস্টেল সুপারের ফোন পেয়ে শুক্রবার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যাদবপুরে গিয়েছিল দাদা। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজার থানায়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরই পুলিশ দাদাকে গ্রেপ্তার করেছে’। শায়েরির কথায়, ‘ও খুবই ভাল ছেলে। ওকে ফাঁসানো হয়েছে।’
নাসিমের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের হাইস্কুলে মাধ্যমিক পাশ করার পর খড়্গপুর আল-আমিন মিশনে ভর্তি হয়েছিলেন নাসিম। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। নাসিমের মা নূরজাহান পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী। নাসিমের বাবা মহসিন আখতার চাষবাস করেন। তাঁর একটি মুদির দোকান ছিল। ছেলের পড়াশোনার জন্য অর্থের জোগান দিতে দোকান বন্ধক রেখেছিলেন নাসিমের বাবা। ছেলের গ্রেপ্তারির খবর পেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা নূরজাহান।
বড়পলাশন ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য বসিরউদ্দিন ইসলাম শেখ বলেন, ‘নাসিম ছেলে হিসেবে খুবই ভালো। কী করে ওর নাম জড়াল বুঝতে পারছি না।’ গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘নাসিমদের পরিবারই খুব ভাল এবং ভদ্র। ছেলের পড়াশোনা করাতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন ওর বাবা।’