পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে বালুরঘাটে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর (Netaji Subhash Chandra Bose) আগমনের ইতিহাস। শহরের স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজরঞ্জন, সুশীলরঞ্জন ও সুরেশরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতেই তিনি একটি রাত কাটান। শতাব্দীপ্রাচীন নাট্যমন্দিরে জনসভা করেন। সেই স্বর্ণালী ইতিহাস এখন সিংহভাগ নতুন প্রজন্মের কাছেই অজানা। বালুরঘাটে নেতাজির আসার কোনও স্মারকও নির্মিত হয়নি শহরে। উপরন্তু চ্যাটার্জি বাড়ির অর্ধেক অংশ ইতিমধ্যেই ভেঙে ফেলা হয়েছে।
১৯২৮ সালে নেতাজি দার্জিলিং মেল ধরে তৎকালীন দিনাজপুরের হিলিতে আসেন। বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত পত্নিতলা ও ধামোরহাটে দুর্ভিক্ষ চলছিল। কিন্তু ত্রাণ বিলি নিয়ে বিট্রিশ সরকার উদাসীন ছিল। নেতাজি দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ান। তখন ব্রিটিশ সরকার দুর্ভিক্ষগ্রস্তদের ত্রান পাঠাতে বাধ্য হয়। সেখান থেকে বালুরঘাটে এসে কংগ্রেস ভবনের দ্বারোদঘাটন করেন। যদিও সেই ভবন প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে আত্রেয়ীর গর্ভে চলে গিয়েছে। সেই সময় বিভিন্ন সমাবেশ করে বালুরঘাটের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা সুরেশ, সুশীল ও সরোজরঞ্জন চ্যাটার্জির বাড়িতেই রাত কাটিয়েছিলেন। পরের দিন হিলির রেল ধরে ফিরে যান। কিন্তু প্রায় দশ বছর আগে সেই বাড়িও ভাঙা পড়েছে। সেখানে কিছুদিন পরেই হয়ত ঝাঁ-চকচকে বহুতল নির্মিত হতে দেখবে শহরবাসী। এখন বাড়ির অর্ধেক অংশকে রক্ষা করে হেরিটেজ ঘোষনা করার দাবি তুলছেন ইতিহাস গবেষক ও সরোজরঞ্জনের পরিবার।
চ্যাটার্জি পরিবারের বর্তমান সদস্যদের দাবি, বহু লড়াই করেও নেতাজির স্মৃতিবিজড়িত সেই বাড়ির অর্ধেক অংশ ভেঙে ফেলা রাখা যায়নি। প্রোমোটারদের হাতে চলে যাচ্ছে ইতিহাস। যদিও নেতাজি এসেছে যে চেয়ারে বসেছিলেন, সেটি এখনও আগলে রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা।
নেতাজির বালুরঘাটে আসা নিয়ে কথা হচ্ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজ রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের নাতবৌ দুর্গা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তার কথায়, ‘আগে এই বাড়ি আকারে বিশাল ছিল। কিন্তু প্রায় দশ বছর আগে আমাদের বাড়ির একটি অংশ বিক্রি হয়ে যায়। সেই সময় আমি জেলাশাসক, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালকে পুরো বাড়ি রক্ষার জন্য জানিয়েছিলাম। এতকিছুর পরেও বাড়ির অর্ধেক অংশ রক্ষা করা যায়নি। প্রোমোটারি রাজে নতুন প্রজন্ম ক্রমশ এই বাড়ির স্মৃতি ভুলতে বসছে। তাই হেরিটেজ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’
ইতিহাস গবেষক সমিত দাস বলেন, ‘বালুরঘাটে চ্যাটার্জি পরিবারের ভাইয়েরা স্বাধীনতা সংগ্রামকে মজবুত করতে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নেতাজির দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু শহরে নেতাজির মূর্তি ছাড়া তাঁর আগমনের কোনও স্মারক নেই। এই নিয়ে জেলাবাসী আবেগতাড়িত হলেও সরকারি কোনও উদ্যোগ নেই। নেতাজি যে জায়গাগুলিতে এসেছিলেন বা যেখানে কর্মসূচি করেছিলেন, সেগুলি সংরক্ষণ করে হেরিটেজ বানানো উচিত।’