প্রসেনজিৎ সাহা, দিনহাটা: দিনহাটা মহকুমা হাসপাতাল থেকে শিশুদের জন্ম-সার্টিফিকেট (Birth-Certificate) নিতে হলে তার বিনিময়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে। সাধারণত ৫০ টাকা নেওয়া হলেও কারও কারও কাছ থেকে ১০০ টাকা করেও নেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারের কোনও হাসাপাতাল থেকে এই পরিষেবার বিনিময়ে টাকা নেওয়ার কথা নয়। তা সত্ত্বেও এই হাসপাতালের রোগী সহায়তাকেন্দ্র থেকে এভাবে টাকা নেওয়ায় বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠেছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ এই এলাকারই বাসিন্দা। তিনি এই হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানও বটে। ফলে তাঁর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের সুপার রণজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘এমন কিছু হচ্ছে বলে রোগীর পরিজনদের তরফে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি। এমন কিছু ঘটে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলে উদয়নও আশ্বাস দিয়েছেন।
রোগীদের (Patients) সহায়তার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী সহায়তাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালেও এমন কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্রে কর্মরত কর্মীদের বিরুদ্ধেই শিশুর জন্ম শংসাপত্রের বিনিময়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সিতাইয়ের বাসিন্দা আলমগির মিয়াঁ সন্তানের জন্ম-সার্টিফিকেটের জন্য এই কেন্দ্রে আবেদনপত্র জমা দেন। সেই সময় তাঁর কাছ থেকে ৫০ টাকা নেওয়া হয়। বদলে কোনও রসিদও দেওয়া হয়নি। কী কারণে টাকা দিলেন বলে প্রশ্ন করা হলে আলমগির বললেন, ‘ওই কর্মী টাকা চাইলেন, তাই দিয়ে দিলাম।’ ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, শুধু যে আবেদনের সময়ই টাকা নেওয়া হচ্ছে তা নয়, কেন্দ্রটি থেকে আবেদনকারীদের হাতে জন্ম–সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার সময়ও একইভাবে ৫০ টাকা বা ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এই টাকা নেওয়ার বিষয়টি যে কোনও অভিযোগ নয় তা এই কেন্দ্রে কর্মরত এক কর্মীই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা টাকা নিই তো। তবে এই টাকার জন্য আমরা কাউকেই কোনও চাপ দিই না। চা খাওয়ার জন্য রোগীর পরিজনরা খুশি হয়ে আমাদের এই টাকা দেন। কেউ ২০ টাকা, কেউবা ৫০ টাকা দেন।’ রোজ এভাবে এই কেন্দ্রটির কর্মীরা গড়ে প্রায় এক হাজার টাকা রোজগার করছেন।
এই কেন্দ্রটিতে যাঁরা কর্মরত রয়েছেন, রাজ্য সরকারের তরফে তাঁদের বেতন দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ওই টাকা কর্মীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যায়। তা সত্ত্বেও ওই কর্মীরা এভাবে টাকা আদায় শুরু করায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে বয়েজ রিক্রিয়েশন ক্লাব এই কেন্দ্রটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ক্লাবের সম্পাদক অর্ঘ্যকমল সরকার বলেন, ‘আমরা মাঝেমধ্যে এই কেন্দ্রটিতে পর্যবেক্ষণ করি। এমন কোনও ঘটনা ঘটছে বলে আমাদের নজরে আসেনি। তবে কেউ যদি খুশি হয়ে কাউকে কিছু দেন তবে আমরা কীই বা করতে পারি!’