শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : আপনার নামে ব্যাংকে কোনও ভুয়ো অ্যাকাউন্ট (Fake account) আছে কি না সে বিষয়ে কি আপনি নিশ্চিত? ভক্তিনগরের বাসিন্দা সুরজিৎ মণ্ডল অন্তত নিশ্চিত ছিলেন। ঋণের জন্য ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর নামে ওই ব্যাংকে আগে থেকেই একটি অ্যাকাউন্ট চালু রয়েছে। সেই অ্যাকাউন্ট থেকে ইতিমধ্যে ১৮ লক্ষেরও বেশি টাকার লেনদেন হয়েছে। সবকিছু দেখে সুরজিতের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার জো হলেও তখনও তাঁর অবাক হওয়ার বাকি। দেখা যায়, সুরজিতের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছবি নেওয়ার পাশাপাশি তাঁর সই জাল করে ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি চালু করা হয়েছে। সবকিছু জানিয়ে সুরজিৎ পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করেন।
অবাক হওয়ার আরও আছে। এবারে দেখা যায়, ওই ব্যাংকের এক কর্মী এই ঘটনায় জড়িয়ে। ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিলকার্ট রোড শাখার কর্মী বিজয় ধরকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযোগ, বিজয়ই ওই ভুয়ো অ্যাকাউন্টটি খুলেছিলেন। বাপি দে নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাপিও ব্যাংকের ওই শাখায় একসময় কাজ করতেন। পরে তিনি ওই কাজটি ছেড়ে দেন। তদন্তকারীদের ধারণা, সুরজিতের নামে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বিজয় সমস্ত তথ্য বাপির কাছ থেকেই সংগ্রহ করেন।
তবে ভেরিফিকেশন ছাড়াই ওই অ্যাকাউন্টটি চালু হওয়ায় ব্যাংকের ওই শাখার ম্যানেজারের ভূমিকা আতশকাচের নীচে। ম্যানেজার সুদীপ বোসের বক্তব্য, ‘এটা বিচারাধীন বিষয়। গ্রাহক ওই অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানতেন নাকি জানতেন না, সে বিষয়ে আমি তদন্তকারীদের প্রয়োজনমতো তথ্য জোগান দেব। আইন আইনের মতন চলবে।’ ব্যাংকের ওই শাখার ক্লাস্টার হেড অমিতাভ সেনগুপ্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ছুটিতে রয়েছি। সোমবার কাজে যোগ দিয়ে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
ঋণের জন্য সুরজিৎ ওই ব্যাংকের শক্তিগড় শাখায় গিয়েছিলেন। সেই সময় তাঁর নামে একটি অ্যাকাউন্ট করার সময়ই দেখা যায় ওই ব্যাংকে আগে থেকেই সুরজিতের নামে একটি অ্যাকাউন্ট চলছে। ওই অ্যাকাউন্টে টাকা রয়েছে বলে দেখা যায়। বিস্তারিত জানতে সুরজিৎ ওই ব্যাংকের স্টেশন ফিডার রোড শাখায় যান। ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি ও তাঁর সই জাল করে ওই অ্যাকাউন্টটি চালু করা হয়েছে বলে সুরজিৎ জানতে পারেন। পরে জানা যায়, ভুয়ো অ্যাকাউন্টটি ওই ব্যাংকের হিলকার্ট রোড শাখায় রয়েছে। সুরজিৎ ওই শাখায় গিয়ে গোটা ঘটনাটি জানানোর পর ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ওই অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেন। দেখা যায়, বিজয় ওই অ্যাকাউন্টটি খুলেছিলেন। সুরজিতের দাবি, তিনি বিজয়কে চেনেন না। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বিজয়কে প্রশ্ন করলে উনি আমার তথ্য বাপির কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানান। বাপির বিষয়ে প্রশ্ন করলে উনি বাইরে আছেন বলে বিজয় জানান।’ সুরজিৎ বাপিকেও চেনেন না বলে জানিয়েছেন। সবকিছু জানিয়ে সুরজিৎ বৃহস্পতিবার পুলিশে অভিযোগ জানান। সেদিনই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ শুক্রবার দুজনকে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তুলে সাতদিনের জন্য হেপাজতে নেয়। তদন্তকারীরা দুজনকে জেরা করছেন।
ঠিক কী হয়েছে সে বিষয়ে তদন্তকারীরা পুরোপুরি স্পষ্ট নন। সুরজিৎ দুজনকে চেনেন না বলে দাবি করলেও কীভাবে তাঁর আধার ও প্যান নম্বর বিজয়দের কাছে গেল তা তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। হালে সাইবার প্রতারণা অনেকটাই বেড়েছে। সেই সমস্ত প্রতারণার টাকা এভাবে ভুয়ো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে কি না তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা, প্রতারণামূলক কাজের উদ্দেশ্যেই এই ভুয়ো অ্যাকাউন্টটি তৈরি করা হয়েছিল। তদন্ত চলছে।